কৃষিসংবাদ

কার্পাস তুলা চাষ যেন রুপালী তুলায় সোনালী স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা

কার্পাস তুলা চাষ

মোঃ মোশারফ হোসেন, শেরপুর :

শেরপুরের নকলায় কার্পাস তুলা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন উপজেলার চন্দ্রকোণা ও চরঅষ্টধর ইউনিয়নের চাষিরা। তুলা চাষে সংসারে স্বচ্ছলা আসায় অন্য ইউনিয়নের চাষিরাও আগ্রহী হচ্ছেন। অনুর্বর জমি ও কম পুঁজিতে , নামে মাত্র শ্রমে সরকারি সহযোগিতা পাওয়ায় দিন দিন উপজেলায় তুলা চাষির সংখ্যা ও পরিমাণ বাড়ছে। তাদের উৎপাদিত  তুলা যেন রুপালী তুলায় সোনালী স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা সরাসরি তুলা উন্নয়ন বোর্ড ন্যায্য দামে কিনে নিচ্ছে। সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলায় সরকারী সহযোগিতায় ২০১৫ সালে পরীক্ষা মূলক ভাবে উন্নত জাতের কার্পাস তুলা চাষ করা হয়। শেরপুরে জেলা ইউনিট কর্মকর্তা মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান প্রথম বারের মত পরীক্ষা মূলক ভাবে সরকারী সহয়তায় ১৮ জন এবং ব্যাক্তি মালিকানায় ১৭ থেকে ২০ জন কৃষক সিবি-১২ এবং হাইব্রিড প্রজাতির রুপালী-১ জাতের তুলার চাষ করছিলেন। ফলন খুবই ভাল হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বেড়ে যায়। তবে কিছুৃ কিছু ক্ষেতে এসিট, জেসিট, আমেরিকান বোলওয়ার্ম, স্পটেট বোলওয়ার্ম ও আঁচা পোকার অক্রমণ দেখা দিয়েছিল। তাই তুলা চাষিরা এর সমস্যার প্রতিকারার্থে তথা কীটশত্রু দমনে কিটনাশকের বদলে ফেরোমেন ফাঁদ ও পার্চিং পদ্ধতিতে বেশ উপকার পেয়েছেন। সাব কটন ইউনিট অফিস সূত্রে জানাযায়, চলতি বছর ৯ শ’ শতাংশ জমিতে রুপালী-১ জাতের কার্পাস তুলা চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে সরকারি সহযোগিতায় ৩৯০ শতাংশ জমিতে এবং ৫১০ শতাংশ জমিতে কৃষকরা নিজ অর্থায়নে চাষ করেছেন। ভালো ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় আগামিতে চাষির সংখ্যা অনেক বাড়বে বলে জানালেন চাষিরা। তারা বলেন, এ দেশে আমেরিকান, ইজিপসিয়ান, ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানি জাতের তুলা চাষ হলেও রুপালী-১ জাতের তুলা অধিক ফলনশীল। তাই কৃষকরা রুপালী-১ জাতের তুলা চাষেই আগ্রহী বেশি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে তুলা চাষ ছড়িয়ে দিতে সম্প্রসারিত তুলা চাষ প্রকল্প (ফেজ-১) সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

তুলা চাষি জাংগীড়ার পাড়ের আরিফুজ্জামান রঞ্জু , আসাদ, হাসান ও নজরুল, রামপুরের রহমত উল্লাহ , চন্দ্রকোনার সাজু সাঈদ সিদ্দিকী ও নূরে আলম সিদ্দিকী সহ অনেকেই বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ালে অধিক অনুর্বর ও অনাবাদি জমিতে তুলা চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। তাদের মতে অনুর্বর জমিতে তুরা চাষ করায় একদিকে যেমন জমির সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে, অন্যদিকে বেশ টাকাও আসছে । নকলা সাব কটন ইউনিট কর্মকর্তা শহিদুর রহমান ও প্রেষণে আসা কর্মকর্তা তোফায়েল আলম বলেন, নকলা উপজেলার সব ইউনিয়নে কার্পাস তুলা চাষ করা সম্ভব। তারা জানান তুলা গ্রীষ্মকালীন ফসল। মে মাসের শেষ ভাগে বা জুনের শুরুতে তুলা বীজ বপন করতে হয়। তুলার ভালো ফলনের জন্য গড়ে ২৩.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাত ৬৩৫ থেকে ১০১৬ মি.মি. হওয়া উত্তম। ১৫ থেকে ২০ সে.মি. গভীরতায় চাস করে হেক্টর প্রতি ২৭৭ কেজি অস্থিচূর্ণ, ৯.৫ টন থেকে ১৩.৮ টন গোবর বা সবুজ সার সহ পরিমিত পরিমাণে ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি সার ব্যবহার করলে ফলন ভালো হয়। আর জাত বেধে বীজ বুনতে হয় ৭.৫ থেকে ১৮ কেজি। গত বছরের সফল তুলা চাষি মোকসেদ মাষ্টার বলেন, ৬ মাসের ওই ফসল সংগ্রহ করা যায় জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মাসে । বিঘা প্রতি উৎপাদন হয় বীজ সহ ১০ থেকে ১২ মণ, বীজ ছাড়া ৫ থেকে ৬ মণ। যার খোলা বাজারে মূল্য ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু সরকারি সহযোগিতা নেওয়ায় তুলা উন্নয়ন বোর্ড বীজ সহ কিনে নেয় ২ হাজার ১শ টাকা প্রতি মণ হিসেবে। ফলে বিঘা প্রতি কৃষকরা দাম পাচ্ছেন ২২ হাজার তেকে ২৬ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি সব মিলিয়ে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। খরচের মধ্যে বিঘা প্রতি ৬ হাজার টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। ফলে কৃষকের পকেট থেকে ব্যয় মাত্র বিঘা প্রতি ৯ হাজার টাকা। সে হিসাবে কৃষকদের বিঘা প্রতি লাভ হচ্ছে ১৩ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। এমন জমিতে অন্য কোন ফসলে পাওয়া কোন ক্রমেই সম্ভব নয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, মানুসের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্যের পরেই বস্রের অবস্থান। আর এ বস্রের ৭০ ভাগ আসে তুলা থেকে। তাই তুলা চাষ কৃষি অফিসের আওতায় না হলেও সরকারের উন্নয়নে সহযোগিতা করার মনোভাব নিয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। যে সকল এলাকায় পতিত জমি আছে সেসব এলাকার কৃষকদেরকে কার্পাস তুলা চাষ এ আগ্রহী করতে নিয়মিত পরামর্শ সেবা দিয়ে যাচ্ছে নকলার কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা।

Exit mobile version