মো. আব্দুর রহমান, বাকৃবি: কালো ফিঙে পাখি
গায়ের রং কুচ
পৃথিবীতে প্রায় ২৪ প্রজাতির ফিঙে আছে এর মধ্যে বাংলাদেশে ৬ প্রজাতির ফিঙে পাখি পাওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই এই পাখির প্রাধান্য লক্ষনীয়। এদের প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুন। গাছের ত্রিডালের ফাঁকে বাটি আকৃতির বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। ফিঙে লম্বায় লেজসহ ২৮-৩১ সেন্টিমিটার। মাথা থেকে লেজের প্রান্ত পর্যন্ত কালো পালকে আবৃত। কালোর ওপরে নীলাভ আভা বের হওয়াতে পালিশ করা চকচকে দেখায়। এদের ঠোঁট ধাতব কালো, গোড়ায় সাদা ফোঁটা থাকে এবং পা কালচে। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের পেটের ওপর থাকে সাদা রেখা। যা দূর থেকে আঁশটে দেখায়। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। মাঝে মাঝেই ফিঙে বড় বড় পাখিদের আক্রমণ করে তাদের বাসার কাছে এলে। তাই অনেক পাখি এর বাসা এড়িয়ে চলে। অনেকে একে আক্রমণাত্মক পাখি হিসাবেও চেনে। ফিঙে মিষ্টি সুরে ডাকতেও পারে।
ফিঙের প্রধান খাবার ক্ষেতের কীটপতঙ্গ। একটি ফিঙে গড়ে প্রতিদিন ২৫-২৮টি মাজরা পোকা খেয়ে থাকে। একটি স্ত্রী মাজরা ২৫০-৩০০ মাজরার মথ জন্ম দেয়। ফিঙে অন্তত একটি স্ত্রী মাজরা পোকা খেলে ৩০০টি পোকা দমন হয়। এছাড়াও ফিঙে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫৪ শতাংশ ঘাসফড়িং, ৪৭ শতাংশ হলুদ মাজরা পোকা, ৩৭ শতাংশ সবুজ পাতাফড়িং, ৩৫ শতাংশ বাদামি গাছফড়িং ও ৯ শতাংশ পামরি পোকা খেয়ে ফেলতে পারে। এতে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি কীটনাশকের অতিরিক্ত খরচ থেকে রেহাই পায় কৃষক।
কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, এ পর্যন্ত ধানের ১৭৫টি প্রজাতির অনিষ্টকারী পোকা শনাক্ত করেছে। এদের মধ্যে ২০-৩৩টি প্রজাতিকে প্রধান ক্ষতিকর পোকা হিসেবে গণ্য করা হয়। এদের আক্রমণে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফিঙে পাখি বিভিন্ন ধরনের পোকা খেয়ে দ্রুত এদের সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।
কৃষিতে ফিঙে পাখির অবদান বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞানের প্রফেসর ড. ছোলায়মান আলী ফকির বলেন, ‘ফিঙে পাখি কৃষি ও কৃষকের অকৃত্রিম বন্ধু। ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে ফিঙে পাখির অবদান অতুলনীয়। পার্চিং পদ্ধতিতে ধানের জমিতে গাছের ডাল পুতে রাখলে, সেখানে ফিঙে পাখি বসে এবং ধানের ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে খায়। ফলে, কৃষককে জমিতে কীটনাশক ব্যবহার থেকে বিরত রাখা যায়’।
এদিকে সহজলভ্য এবং উপকারী হওয়ায় জমিতে গাছের ডাল পুতে ফিঙে পাখির মাধ্যমে জমির ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পার্চিং পদ্ধতি।