কৃষিসংবাদ

খুলনায় আধুনিক হ্যাচারি নির্মাণ কাঁকড়া শিল্পে দেখা দিচ্ছে নতুন সম্ভাবনা

কাঁকড়া শিল্পে দেখা দিচ্ছে নতুন সম্ভাবনা
কৃষিবিদ জাহেদুল আলম রুবেল

কাঁকড়া শিল্পে দেখা দিচ্ছে নতুন সম্ভাবনা
দেশের মিঠাপানির চার প্রজাতি ও লোনাপানির ১২ প্রজাতির কাঁকড়া মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন বাজারে রপ্তানি হয় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কাঁকড়া রপ্তানি করে বাংলাদেশ ২৩ মিলিয়ন ডলার আয় করে। খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের লোনাপানি কেন্দ্রে এক কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে আধুনিক কাঁকড়া হ্যাচারি। বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা প্রকল্প (কম্পোন্যান্ট-বি, বিএফআরআই অংশ) হিসেবে এ হ্যাচারি নির্মাণ হয়েছে। অচিরেই এটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা ও কাঁকড়া চাষিরা বলেছেন, হ্যাচারি নির্মাণ হওয়ায় উপকূলীয় এ অঞ্চলে কাঁকড়াশিল্পের জন্য সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন হবে।

কাঁকড়া শিল্পে দেখা দিচ্ছে নতুন সম্ভাবনা
তাঁরা জানান, বাংলাদেশের অপ্রচলিত জলজ সম্পদের মধ্যে কাঁকড়া উল্লেখযোগ্য একটি রপ্তানি পণ্য। দেশজ মৎস্য সম্পদের মধ্যে রপ্তানি বাণিজ্যে চিংড়ির পরেই কাঁকড়ার অবস্থান। বাংলাদেশের মিঠাপানির চার প্রজাতি ও লোনাপানির ১২ প্রজাতির কাঁকড়া মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন বাজারে রপ্তানি হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কাঁকড়া রপ্তানি করে বাংলাদেশ ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই শীলা কাঁকড়া পাওয়া যায়। স্বাদে অতুলনীয় ও পুষ্টিমানে ভরপুর কাঁকড়ার আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এর আহরণের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওজনে শীলা কাঁকড়া দুই কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে ২০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের পরিপক্ব কাঁকড়ার চাহিদা ও বাজার মূল্য বেশি। মূলত ৮০-এর দশকে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে শীলা কাঁকড়ার চাষ ও মোটাতাজাকরণ (ফ্যাটেনিং) শুরু হয়। চাষ ও ফ্যাটেনিংয়ের শতভাগ কাঁকড়া প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরণের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কাঁকড়া চাষের ব্যাপকতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

ঘের, পুকুর ও খাঁচায় কাঁকড়ার চাষ ও ফ্যাটেনিং উপকূলীয় এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে নরম খোলসের কাঁকড়ার চাষও করছেন। অধিক মুনাফা লাভের আশায় এর সঙ্গে জড়িতরা নির্বিচারে মা কাঁকড়ার পাশাপাশি অপরিপক্ব ছোট কাঁকড়া পাল্লা দিয়ে আহরণ করছেন। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলীয় বিশাল অঞ্চলে কৃষিপণ্যের উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। একই সঙ্গে গলদা ও চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের কাঁকড়া সম্পদের প্রাপ্যতা ও জীববৈচিত্র্য ক্রমান্বয়ে হুমকির মুখে পড়ছে। এ অবস্থায় কাঁকড়া চাষকে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলভাবে বিকশিত করার জন্য কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন জরুরি। এরই মধ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কৃত্রিম উপায়ে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করেছে। আর এই পোনা উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে সংস্থাটি লোনাপানি কেন্দ্রে আধুনিক মানের কাঁকড়া হ্যাচারি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। গত ছয় মাসে এক কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিক হ্যাচারিটি নির্মাণ করেছে খুলনার হাসান ইমাম সোহেলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোহেল কনস্ট্রাকশন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গুণগতমান বজায় রেখে মাত্র ছয় মাসে আধুনিক মানের হ্যাচারির নির্মাণকাজ শেষ করেছি। এখন যেকোনো সময় এটি চালু করা যাবে। বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. ডুরিন আখতার জাহান বলেন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এরই মধ্যে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু বর্তমানে লার্ভি বেঁচে থাকার হার ০.৮৭ থেকে ১.০৫ পর্যন্ত রয়েছে। এটিকে ৫-৮% পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য নবনির্মিত কাঁকড়া হ্যাচারিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাণিজ্যিকভাবে শীলা কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন কৌশল সম্প্রসারণ করা সম্ভব হলে কাঁকড়া চাষে পোনা প্রাপ্যতা সহজলভ্য হবে, পাশাপাশি প্রাকৃতিক নির্ভরশীলতা কমে আসবে।

পাইকগাছা লোনাপানি কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. লতিফুল ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ ও প্রকল্প পরিচালক ড. ডুরিন আখতার জাহানসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হ্যাচারি পরিদর্শন করেছেন। অল্প সময়ের মধ্যে হ্যাচারিটি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি উদ্বোধন করবেন। এটি চালু হলে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

লেখকঃমফস্বল সম্পাদক
কালের কণ্ঠ,বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা

Exit mobile version