কৃষিসংবাদ

শখের বসে বাসার ছাদে কবুতর খামার করছেন অনেকেঃ আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন

মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা থেকে :

শখের বসে বাসার ছাদে কবুতর খামার

তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ইলেকট্রিক, সেনেটারী ও টাইলস মিশ্রি ঠিকাদার। কাজের চাপ বেশি থাকলে সময় সুযোগে বাধ্য হয়ে তিনি নিজেও মিশ্রির কাজ করেন। তার শখের মধ্যে প্রিয় হলো পাখি পালন, আর তাইতো ছোট কাল হতেই তিনি পাখি পালন করে তার শখ পূরণ করে আসছেন। আর শখ পূরণেই নকলা শহরের নিজ বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন দেশি বিদেশেী কবুতরের সমন্বয়ে বিশাল খামার। শুরুটা শখের হলেও বর্তমানে তা বানিজ্যিক আকার ধারন করেছে। বাসার ছাদের ওই খামার থেকে বছরে ২ লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করছেন তিনি। সল্প জায়গায় অল্প শ্রমে কবুতর খামারে অধিক লাভ হওয়ায় শিক্ষার্থী ও বেকার যুবক ও যুবনারীরা কবুতর পলনে ঝুঁকছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অনেকেই বানিজ্যিক ভিত্তিতে কবুতর খামার গড়ে তুলেছেন। কেউ কেউ কবুতর পালনে পবনের মতো সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন। তারা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হয়ে উঠছেন।

সরেজমিনে গোলাম জাকারিয়া পবনের খামারে প্রায় একশ’ জোড়া কবুতর রয়েছে। তার মধ্যে উচ্চ উৎপাদনশীল ৬৫ থেকে ৭০ জোড়া বিদেশী এবং ৩০ থেকে ৩৫ জোড়া দেশি কবুতর রয়েছে। তাছাড়া ৫৭ জোড়া কবুতরের বাসায় (খোপে) দুটি করে বাচ্চা রয়েছে এবং ২১ জোড়া কবুতর ডিমে তা দিচ্ছে।

খামারি গোলাম জাকারিয়া পবনের দেওয়া তথ্যমতে, ছোট কাল হতেই তিনি বিভিন্ন পাখি পালন করতেন। পাখি পালনে অতিরিক্ত নেশার কারনে তিনি পড়া লেখায় বেশিদূর এগুতে পারেননি। তবে একটি দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে কবুতর পালন করে সফলতার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। ২০১৪ সালে কৃষি ও প্রাণি বিভাগের পরামর্শে তার নিজের বাসার ছাদে বিভিন্ন ফলজ গাছ, শাক-সবজি চাষ ও কবুতর পালন শুরু করেন। ফলজ গাছ ও শাক-সবজিতে তেমন সফলতা না পেলেও, কবুতর খামারি হিসেবে তিনি এক নামে পরিচিতি পেয়েছেন। প্রথমে দুই জোড়া বিদেশী ও তিন জোড়া দেশি কবুতর নিয়ে তার খামারের যাত্রা শুরু হয়। এর পরে তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। গত তিন বছরে বাচ্চা বিক্রি থেকে তিনি ৭ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা আয় করেছেন। তার খামারে বছরে ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আর সব বখরচ বাদে বছরে তার লাভ থাকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা। পবন জানান রাজধানী ঢাকার সাভার ও টঙ্গী; টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহ, হালুয়াঘাট, ফুলপুর, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে বিভিন্ন জাতের কবুতর সংগ্রহ করেছেন তিনি। আর তার উৎপাদিত কবুতরের বাচ্চা গুলো বিক্রি করেছেন ওইসব এলাকাতেই। পবনের দেখাদেখি ডাকতিয়াকান্দার মোরশেদ, দক্ষিণ নকলার মামুন, জানকীপুরের দেলোয়ার, বাজার্দির জলিল, দক্ষিণ কায়দার রাব্বীনূর ইসলাম ও আফরিন আন্না; গৌড়দ্বারের আসাদ, গনপদ্দীর সালাম, জালালপুরের ঝুমুর পোদ্দারসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও বেকার যুবক-যুবনারী কবুতর পালন শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে মুরশেদ, মামুন, দেলোয়ার, ঝুমুর পোদ্দার সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন। তাদের খামারে বিদেশী কবুতরগুলোর মধ্যে কিং, ম্যাগপাই, রেচিং, বাগদাদী, হোমার, সিরাজী, ঘিরিবাজ, নান, শর্টপীচ, টগা, ছোঁয়া চন্দন, পারভীন, কাপতান, রেন, কাজী, গিয়াছলী, লক্ষা, ঝর্ণা সাটিং ও হাইব্রিট ক্রস উল্লেখযোগ্য।

মামুন ও মোরশেদ জানান, কবুতরের খাবার হিসিবে ডাবলী ডাল, গম, চিনা, ঘাসের বীজ (কাইন), কালাই, সরিষা, ধান ও বয়লার মুরগির খাবার উল্লেখযোগ্য। তাদের খামারে সর্বোচ্চ দামী কবুতরের বাচ্চা ১১ হাজার টাকা জোড়া এবং সর্বনিম্ম দামী কবুতর বাচ্চার জোড়া ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। প্রথম প্রথম ঔষুধ বাবদ বেশি খরচ হলেও যত দিন যায় অভিজ্ঞতা অর্জনের ফলে ততই ঔষুধের ব্যয় কমে আসে বলে খামারিরা জানান। কবুতরকে দামী কোন খাবার ও বাড়তি সময় দিতে হয় না; তাই শিক্ষার্থীরাও কবুতর পালন করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

আগামী বছরের শুরুতে আরো নতুন নতুন খামারি হবে বলে জানান অনেকেই। ভূরদী খন্দকার পাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার বেশ কয়েকজন সদস্য কবুতর পালনের লক্ষ্যে পবন ও মামুনের কাছে পরামর্শ নিয়েছেন। তাছাড়া মরাকান্দার মনির, হেলাল, গনপদ্দীর ফজলুল হক, চিথলিয়ার আলমগীর, ধুকুড়িয়ার শামীম ও রিয়াদ; জালালপুরের আলাল, নয়া পাড়ার মিনহাজসহ অসংখ্য শিক্ষার্থী শখের বসে কবুতর পালন করছেন। এতে লাভ দেখে তাদের মধ্য থেকে অনেকেই আগামীতে ছোট করে হলেও খামার করবেন বলে তারা সবাই জানান।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ছাদে ফলজ বাগানের পাশাপাশি কবুতর পালনের উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, বেকারদের পাশাপাশি যেকোন সৌখিন মানুষ ছাদে বানিজ্যিক ভাবে কবুতর পালন করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। তাই প্রাণি সম্পদ বিভাগের পক্ষথেকে খামারিদের সবধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সহজ ব্যাংক ঋণ, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন ও সার্বিক সহযোগিতাসহ পরামর্শ পেলে কবুতর পালন করে বেকারত্বকে দুরে ঠেলে আত্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব বলে মনে করছেন সুধীজনে।

Exit mobile version