জুন মাসের কৃষি অথবা- জৈষ্ঠ্য মাসের দ্বিতীয় পক্ষের কৃষি কাজ

দিনাজপুরে ধানের ফলন

* কৃষিবিদ বকুল হাসান খান *

সুপ্রিয় চাষী ভাই , বোরো ধান কাটার সময়। পাকা সোনালী ধানের ঘ্রাণ মনকে মাতিয়ে তোলে। তাই আসুন জেনে নেই , এ সময়ের কৃষিতে করণীয় কাজ ঃ-
ধান ঃ– এখন বোরো ধান কাটার সময়। আপনার জমির রোপা আমন ধান ৮০% পাকলে ধান কেটে ফেলতে পারেন। মনে রাখবেন, রৌদ্রজ্জল দিন দেখে ধান কাটতে হবে। ধান কাটার পর ‘ব্রি ওপেন ড্রাম পাওয়ার থ্রেসার’ যন্ত্র দিয়ে সহজেই ধান মাড়াই করতে পারেন। এ যন্ত্র দিয়ে ঘন্টায় ১০ মন ধান মাড়াই যায় এবং ৩ জন শ্রমিক একত্রে কাজ করতে পারেন। ধান মাড়াই বা পরিস্কার করার জন্য আপনি “ব্রি পাওয়ার উইনোয়ার”ব্যবহার করতে পারেন। এ যন্ত্র দিয়ে ঘন্টায় ১২ মণ ধান ঝাড়াই করতে পারবেন এতে ২ জন শ্রমিক লাগবে। রোদের সমস্যায় “ ইরি ব্রি ড্রায়ার ” যন্ত্রের সাহায্যে সহজেই ধান শুকানো যায়। শুকানো আর্দ্রতা ১২% বেশী না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শুকানো ধান সতর্কতার সাথে গোলাজাত করতে হবে। আগামী মৌসুমের জন্য বীজ রাখতে চাইলে সুস্থ,সবল ও ভাল অংশের বোরো ধান নির্বাচন করতে পারেন।
এখন রোপা আমন বীজতলা তৈরির সময়। বীজতলা তৈরির জন্য উঁচু জমি নির্বাচন করতে পারেন যেখানে সূর্যে আলো পরে। বীজের জন্য নির্বাচিত জমি ভালভাবে চাষ দিয়ে কাদা কাদা করুন। জমির আয়তন অনুযায়ী লম্বা, ৪ ফুট চওড়া করে বীজতলার বেড তৈরি করুন। বেডের চারপাশে দেড়ফুট চওড়া নালা রাখা প্রয়োজন। রোপা আমনের জন্য উন্নত কয়েকটি ধানের জাত হচ্ছেঃ- বি আর-৫, বি আর-১০, বি আর-২২, বি আর-২৩, বি আর-২৫, ব্রিধান-৩০, ব্রিধান-৩১, ব্রিধান-৩২, ব্রিধান-৩৩, ব্রিধান-৩৪, ব্রিধান-৩৭, ব্রিধান-৩৮, ব্রিধান-৩৯, ব্রিধান-৪০, ব্রিধান- ৪১, বিনাশাইল।
পাটঃ– পাটের জমির আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। পাট গাছ বেশি ঘন হলে সুস্থ ওসবল চারা রেখে পাতলা করে দিতে হবে। বৃষ্টির পানি বেশি জমে গেলে বের করে দিতে হবে। পাটে বিচা ও ঘোড়া পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। পাখি বসার ব্যবস্থা করে দিলে এ পোকা খেয়ে ফেলবে আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
শাক-সবজি ঃ শাক সবজি চাষে অনেক লাভ বেশি । তাই শাক-সবজি চাষের দিকে বেশি করে ঝুকি নিতে পারেন। অগ্রিম চাষ করুন, সঠিক ভাবে যতœ নিন। অধিক ফলনের জন্য দেশী-বিদেশী আধুনিক জাতের ব্যবহার করুন। এ সময়ে উৎপাদিত সবজির মধ্যে যেমন- ডাটা, গিমাকলমি, পুঁইশাক, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, ঝিঙা, শসা, ঢেঁড়স,কাকরোল, গ্রীষ্মকালীন টমেটো, বেগুন। পূর্বে বপনকৃত সবজি গোড়ার আগাছা পরিষ্কার দিতে হবে। লতা জাতীয় সবজি মাচায় তুলে দেওয়ার জন্য ব্যবস্তা নিতে হবে। পাতা বা লতা বেশি হলে ছাটাই করে দিতে হবে।
অন্যান্য ফসলঃ- এ সময় আদা হলুদ চাষ করতে পারেন। গ্রীষ্মকালীন মুগ ডালের চাষচাষ করা যেতে পারে। সবুজ সার ফসল –ধৈঞ্চা,শনপাট ও ডালজাতীয় ফসলের বীজ বুনে দিতে পারেন। পূর্বে চাষকৃত সবুজ সার ফসলের বয়স ৩৫-৪৫ দিন হলে চাষ ও মই দিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে পারেন।
গাছপালা ঃ– বছরে দু’বার গাছপালয় সার দিতে হয়। বর্ষার আগে একবার আর বর্ষার পরে আরেকবার।সার না দিয়ে থাকলে দ্রুত পূর্বে রোপণকৃত গাছপালার গোড়ার চারাপাশ কুপিয়ে দিন। আগাছা পরিষ্কার করে সার দিয়ে দিন। আরো নতুন গাছ লাগিয়ে দিন। নতুন করে গাছ রোপণ করার জন্য জৈব ও রাসায়নিক সার দিয়ে গর্ত ভরাট করে রাখুন। গর্ত ভরাটের ৭-১০ দিন পর চারা রোপনের কাজ করতে পারেন।
পশু সম্পদ ঃ- গবাদি পশুর আবাসস্থল মেরামত করে নিন। ঘরের চারপাশ পরিষ্কার করে রাখুন।বর্ষায় যাতে খাদ্যে সংকটে নাপরতে হয় তার জন্য গো-খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। । গবাদি পশুকে খড়ের সাথে কাচা ঘাস খাওয়ান। গর্ভবর্তী গাভী ও বাছুরের যতœ নিন। নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা দিয়ে নিন।
মাছ ঃ– বর্ষার পূর্বে পুকুর পাড় সংস্কার করে নিন। এখন মাছের প্রজননের সময় সময় পুকুরের আগাছা পরিষ্কার করে নিন। সম্পূরক খাবার দিন, সার প্রয়োগ করুন। জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরিক্ষা করে নিন।
রোগমুক্ত, উন্নত জাতের বীজ, আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ও সঠিক নিয়ম অনুযায়ী চাষ করুন। যে কোন পরামর্শের জন্য আপনার এলাকায় নিয়োজিত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, নিকটের কৃষি পরামর্শকেন্দ্র অথবা উপজেলা কৃষি, মৎস্য ও পশু সম্পদ অফিসে যোগাযোগ করুন।

কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *