কৃষিসংবাদ

শৈত্য প্রবাহের কারণে কৃষিতে ক্ষয় ক্ষতির ব্যাপক আশঙ্কা

Boro Rice seedlingকৃষি সংবাদ ডেস্কঃ
গত কয়েকদিন দেশে প্রচন্ড শীত পড়েছে। অনেক এলাকার বিশেষ করে উত্তর বঙ্গে মানুষের জীবন যাত্রা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম।  এক দিকে  শীত  অন্য দিকে মেঘলা আকাশ সব মিলিয়ে অনেকের ঠান্ডা জনিত সর্দি কাশি পেটে পীড়া দেখা দিয়েছে। শীতের তীব্রতার কারণে বোরো ধানের বীজতলায় চারা হলুদ হয়ে মারা যাচ্ছে।

কিছুদিন আগের হালকা শীতের মাঝে মেঘলা আকাশ আর কয়েক পশলা বৃষ্টি চাষিদের কাছে অশনি সঙ্কেত বয়ে এনেছে। তার ওপর গরম পড়ায় ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। শীতকালীন সবজি, বিশেষ করে বাঁধাকপি, ফুলকপি ফলনের ভরা মৌসুম চলছে। এ সময় আবহাওয়ার এমন অস্বাভাবিক পরিবর্তন গাছের স্বাভাবিক সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত করছে বলেই মনে করছেন কৃষিবিদরা। অন্যদিকে আবহাওয়ার অস্বাভাবিকতার কারণে ফসলে পোকার উপদ্রবও বাড়তে পারে। কৃষিবিদরা বলছেন, শীতের ফসলের জন্য শীত একটা সময় পর্যন্ত চলমান না থাকলে ফলনে প্রভাব পড়বে। যেমন সরষে, বাঁধাকপি, ফুলকপি ঠিকমতো বাড়বে না।

দেশে আলু উৎপাদনে শীর্ষ জেলা মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় আলুর জমিতে ইতিমধ্যে নাবী ধসা (Late Blight) রোগ দেখা দিয়েছে। বিস্তীর্ণ জমিতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ায় হতাশ কৃষক। তাপমাত্রার ওঠানামার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় ছত্রাকনাশক ছিটিয়ে যাচ্ছে কৃষক। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আলুর ফলন আশানুরূপ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রোগের প্রকোপ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গত ১৮ জানুয়ারি মাইকিং করা হয়েছে। এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সকল মাঠকর্মীর ছুটি বাতিল করেছেন। কৃষক ও কীটনাশক ডিলারদের মাঝে প্রায় এক হাজার সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।

তবে আবহাওয়ার এই হঠাৎ পরিবর্তন সাময়িক। কিন্তু এতে ফলনের মুখে থাকা চাষের সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়। এবারও যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়েছে। একে মেঘলা, তার ওপর কদিন টানা গরমে পোকার আক্রমণ, ছত্রাকজনিত রোগ ধান ও সবজির ক্ষতি করতে পারে। ফলের ক্ষেত্রেও পচন ধরার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু প্রকৃতির ওপর তো মানুষের নিয়ন্ত্রণ নেই। সুতরাং আমাদের এসব ফসল যাতে সারাবছর জুড়ে উৎপাদন করা যায় তার দিকে নজর দিতে হবে।

গত দুই বছরের পরিসংখ্যান হিসাব করলে দেখা যাবে, ২০১৩ সালে দু-দুবার শীতে রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রা নেমে যায়। কিন্তু দুই বছর পর এ বছর তার ধরন বদলে গেছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে শীতের কোনো ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে না। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে। কোনো বছর বেশি শীত পড়ছে। আর কোনো বছর শীতের দেখাই মিলছে না। ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬ থেকে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেই অবস্থান করছে। মাঝে মধ্যে কয়েকটি সেন্টারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হলেও শীত বৃদ্ধিতে তা ভূমিকা রাখতে পারছে না।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শীত এবার অনেক খামখেয়ালি আচরণ করছে। তার জন্য দায়ী করা হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা এল নিনো পরিস্থিতিকে। কারণ প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়ায় প্রভাব ফেলেছে। ফলে বদলে গেছে ফিরতি পথের মৌসুমি বায়ুর চরিত্র। শীতেও সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে এবং তা উত্তরে হাওয়ার সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে। আবহাওয়াবিদরা আরো বলছেন, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে আসা উত্তরে হাওয়ার ওপর ভারত ও বাংলাদেশে শীতের মাত্রা হ্রাস ও বৃদ্ধির বিষয়টি নির্ভর করে।

এ বছর ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে ঠান্ডা হাওয়া বা পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কাশ্মীরে আছড়ে পড়ে। তার জেরে সেখানে বৃষ্টি ও তুষারপাত হয়। সেখান থেকে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে আসে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি পূর্ব ভারতের দিকেও। এ পর্যায়ে যদি সাগরে কোনো নিম্নচাপ তৈরি হয়, তাহলে তা উত্তরে হাওয়ার পথে বাধা তৈরি করে। শুধু তাই নয়, সাগর থেকে জলীয়বাষ্প ঢোকার ফলে আকাশে মেঘ তৈরি হয়, দিনের তাপমাত্রা কমলেও রাতের তাপমাত্রা নামতে পারে না। অথচ রাতে কনকনে শীত পড়তে গেলে মেঘমুক্ত আকাশ থাকতে হবে। আর চড়া রোদে দিনেরবেলা মাটি গরম হওয়াও জরুরি। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায়নি।

গোটা বিশ্বজুড়েই এই রকম আবহাওয়ায় বিভ্রান্ত চাষিরা। কোথাও তাপমাত্রা বাড়ছে তো কোথাও বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হচ্ছে। গেল বছর বিশ্বের গড় তাপমাত্রা উষ্ণতার সব রেকর্ড ভেঙেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া দপ্তরও একই কথা বলছে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, ঝড়-ঝঞ্ঝা ও শীতের তারতম্য ঘটছে এমনটাই ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। তাই, বৈশ্বিক আবহাওয়ার স্বাভাবিক গতি নষ্ট করে দেয়া উষ্ণতাকে থামাতে গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন ব্যাপকভাবে কমানো দরকার বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এমত পরিস্থিতিতে নিয়মিত ফসলের জমি  পরিদর্শন করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম 

Exit mobile version