কৃষিসংবাদ

সয়াবিন ও ছোলার গোড়া পঁচা রোগের পরিবেশবান্ধব দমন ব্যবস্থা

রোগের পরিবেশবান্ধব দমন

রোগের পরিবেশবান্ধব দমন

ড. মাহ্বুবা কানিজ হাস্না
রোগের পরিবেশবান্ধব দমন ঃ সারা পৃথিবীতে সয়াবিন একটি প্রধান তৈলবীজ ফসল। তেল ফসল হিসেবে সয়াবিনের চাষ বাংলাদেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। সয়াবিন থেকে উৎকৃষ্ট মানের ভোজ্য তেল পাওযা যায় এবং এ তেল থেকে প্রাপ্ত ফ্যাটি এসিডগুলি মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী। সয়া প্রোটিন অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিডে অত্যšত সমৃদ্ধ বলে এর জৈবমান মাছ-মাংসের মতই। ছোলা আমাদের দেশের অতি পরিচিত জনপ্রিয় এক ডাল যা শরীরের প্রোটিন চাহিদা পূরণে সক্ষম। এটি উচ্চ আশযুক্ত বলে ডাল হিসেবে অনেক উন্নত। জনপ্রিয় এই ফসল দুটি মাঠে বিভিন্ন রোগে আক্রাšত হতে পারে যা ফলন হ্রাসের অন্যতম কারন। সয়াবিন ও ছোলার বিভিন্ন রোগের মধ্যে গোড়া পঁচা একটি মাটিবাহিত মারাত্মক রোগ যা স্কে¬রোসিয়াম রল্ফসি নামক ছত্রাকের আক্রমনে হয়। চারা ও বয়স্ক গাছে এ রোগ হয়। রোগের আক্রমনে গাছের গোড়ায় মটির সংযোগ স্থলে পচন দেখা দেয়। গাছ হলুদ হয়ে যায়, ঢলে পড়ে এবং সবশেষে শুকিয়ে মারা যায়। কৃষক তার কাংখিত ফলন থেকে বঞ্চিত হয়। স্কে¬রোসিয়াম ছত্রাক স্কে¬রোসিয়া তৈরী করে মাটিতে দীর্ঘদিন বেচে থাকতে পারে বলে একে নিয়ন্ত্রন করা কঠিন। প্রচলিত রাসায়নিক ছত্রাকনাশক দিয়ে এ রোগের আক্রমন কিছুটা কমানো সম্ভব হলেও মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য এর ব্যবহার হুমকিস্বরুপ।

ফসলের রোগ দমনে ট্রাইকোডারমা ছত্রাক সহযোগে গঠিত “বিনা জৈব ছত্রাকনাশক” একটি পরিবেশবান্ধব ছত্রাকনাশক। মসুর, ছোলা, টমেটোর গোড়া পঁচাসহ ধানের খোলপোড়া রোগ দমনে এর বিশেষ কার্যকারীতা বিভিন্ন গবেষনায় প্রমানিত। জৈব ছত্রাকনাশক মাঠে ফসলের রোগ দমন করে জমিতে কাংখিত গাছের সংখ্যা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি করে। এটি পরিবেশবান্ধব বলে রাসায়নিক ছত্রাকনাশকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। রাসায়নিক ছত্রাকনাশক ব্যবহারে মাটির গুনগুন নষ্ট হয় কিন্তু জৈব ছত্রাকনাশক প্রয়োগে মাটির গুনাগুন আরও বৃদ্ধি পায়। জৈব ছত্রাকনাশক রাসায়নিক ছত্রাকনাশকের তুলনায় অর্থ সাশ্রয়ী। “বিনা জৈব ছত্রাকনাশক” কৃষিজ উচ্ছিষ্টে জন্মানো ছত্রাকনাশক। তবে পিট মাটি বা ট্যালকম পাউডারেও ফরমুলেটেড করা যায়। বিনা জৈব ছত্রাকনাশকের প্রয়োগ বিধি সহজ এবং সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ পেলে কৃষক এটা ব্যবহার করতে পারবে।

সয়াবিন ও ছোলার গোড়া পঁচা রোগ দমনে বিনা জৈব ছত্রাকনাশক মাটিতে এবং বীজ শোধনে প্রয়োগ করা যায়। এই ছত্রাকনাশকটি জীবানুভিত্তিক বালাইনাশক বলে এর প্রয়োগ পদ্ধতি রাসায়নিক ছত্রাকনাশক থেকে ভিন্ন। এ ছত্রাকনাশকের কার্যকরীতা এর প্রয়োগ কলাকৌশলের উপর অনেকটাই নির্ভর করে। মাঠে প্রয়োগ করতে হলে মাটির জো-অবস্থায় বীজ বপনের পূর্বে জৈব ছত্রাকনাশকের ১০০ কেজি প্রতি হেক্টর মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে এবং ২০ দিন পর পর দুই ধাপে ৫০ কেজি করে প্রয়োগ করতে হবে। বীজ শোধনে বীজের ওজনের ৩% বিনা জৈব ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োগ পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরন করলে বিনা জৈব ছত্রাকনাশক সয়াবিন ও ছোলার গোড়া পঁচা রোগ ৬০% পর্যšত দমন করে ফলন বৃদ্ধি করতে সক্ষম।
বিনা জৈব ছত্রাকনাশক অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা স্থানে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন কারন রোদ বা বেশী তাপমাত্রায় (৪৫ সে. এর উপরে) এর গুনাগুণ দ্রুত নষ্ট হয়। উৎপাদনের ৩ মাসের মধ্যে ব্যবহার করলে ভাল ফলাফল লাভ করা যায়।
ঃলেখক: প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগ
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট
বাকৃবি চত্বর, ময়মনসিংহ-২২০২

Exit mobile version