কৃষিসংবাদ

এক যুগ পূর্তি পালন করল সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)

খলিলুর রহমান ফয়সালঃ

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ঃ কৃষি নিয়ে সম্ভাবনার যে বড় বড় স¦প্নগুলো তৈরি হয়েছিলো ১২ বছর পর তা সাফল্য হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের সামগ্রিক কৃষি ব্যবস্থাকে উন্নত করতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টিত হয়। সিলেটের লালচে মাটির গুণগতমান দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভিন্নতর। আবার বৃহত্তর সিলেটে রয়েছে হাজার হাজার একর অনাবাদি উঁচু-নিচু পাহাড়ী অসমতল ভূমি। আছে হাওর নামের বিস্তীর্ণ জলাশয়। অপার সম্ভাবনাময় এসব প্রাকৃতিক সম্পদসমূহকে গবেষণার মাধ্যমে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার জন্য ২০০৬ সালে ২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো ক্যাম্পাসটি। ইতোমধ্যে ৬টি অনুষদ সাফল্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। সিলেট সরকারী ভেটেরিনারি কলেজ থেকে মাত্র ৫০ একর জায়গা শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম। একযুগ পর টিলাঘেরা এই সবুজ মৃত্তিকার উপরই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

ষোল কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে একটা মানুষও না খেয়ে নেই। দাম যেমন তেমন এখন আর দূর্ভিক্ষ হয় না। দেশী মাছ হারিয়ে গেলেও হাইব্রিড মাছ পাওয়া যাচ্ছে দেদারসে। মেহমান এলে সাধের পালা মুরগী উঠোন থেকে ধরে এনে জবাই করতে হয় না। অল্পটাকায় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে পোল্ট্রি। যে ক্ষেতে আগে ১ টন ধান ফলন হতো, এখন সেখানে হচ্ছে এখন ফলছে ৫-৬ টন। আর এই সবই সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের কারণে। আর প্রতি বছর এরকম বহু কৃষি বিজ্ঞানী তৈরি করে সারা বাংলাদেশ ছড়িয়ে দিচ্ছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

এখন পর্যন্ত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ এবং মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ থেকে গ্র্যাজুয়েট হিসেবে ৭টি করে ১৪টি ব্যাচ বের হয়েছে। এদিকে ভেটেরিনারি, এনিম্যাল অ্যান্ড বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সস অনুষদ থেকে ইতোমধ্যে ১৯টি ব্যাচ বেরিয়ে গেছে। সম্প্রতি কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ থেকে বেরোলো পাঁচটি ব্যাচ এবং কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ থেকে আরো তিনটি ব্যাচ। বিসিএস পরীক্ষাসহ দেশে বিদেশে আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের ছড়াছড়ি। ভাবতে ভালই লাগছে এরা সবাই এখন স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করে আছে এবং বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

ছোটবড় টিলা পরিবেষ্টিত ৫০ একর আয়তনের মনোরম সিকৃবি ক্যাম্পাস। সবুজে ঘেরা, ছোট ছোট টিলা ক্যাম্পাসের পরিবেশকে আরো মোহনীয় করে তুলেছে। আয়তনে ছোট হলেও এর রূপ-সৌন্দর্য্য আমাদের হৃদয়ে আলাদা একটা টান ও ভালবাসা জন্মায়। প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে দেখেছি কিভাবে ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছে আমার প্রিয় ক্যাম্পাসটি। সিকৃবির শিক্ষার্থীরা এখানকার বিভিন্ন সংগঠনে যোগ দিয়ে নিজেদের আত্মবিশ্বাস আরো বাড়িয়েছে। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো মননশীল চিন্তা করতে সাহায্য করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে আর আড্ডা হবে না সেটা কি হয়! কেউ কেউ আবার ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে দেয় আড্ডা। এর মধ্যে ফুচকা চত্বর, জালাল মামার চায়ের দোকান, ট্যাংকির তলা, কাঁঠাল তলা, ক্যাফেটেরিয়া, ইকোপার্ক ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়।

গত ফেব্রুয়ারিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে এসেছিলেন। অই অনুষ্ঠানে ১ হাজার ৭৩৩ জনকে স্নাতক, ৫১৫ জনকে মাস্টার্স সনদ ও একজনকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বারো বছরে দাঁিড়য়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের মান নিয়ে সবাই গর্ব করছে। তবে আমার কাছে আবেগের আরেকটি নাম সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। নবান্নকে সামনে রেখে ছায়া-সুনিবিড়, সবুজ টিলায় ঘেরা ছোট্ট সুন্দর ক্যাম্পাসের জন্মদিনে প্রতিটি ধূলিকণায় যেন রং লেগেছে। এর রং ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়।

 

Exit mobile version