কৃষিসংবাদ

কাঁঠাল,কলাও টমেটোর অপচয় রোধে উদ্যোগ গ্রহন করেছে সার্ক কৃষি কেন্দ্র

অপচয় রোধে উদ্যোগ

অপচয় রোধে উদ্যোগ

আব্দুল মান্নান

অপচয় রোধে উদ্যোগ ঃ বাংলাদেশের অর্থনীতি বহু অংশেই নির্ভর করে দেশের কৃষিক্ষেত্রের উপর এবং প্রায় ৫৫-৬০ ভাগ লোক তাদের জীবিকা নির্বাহ করে কৃষি কাজ ও কৃষি ব্যবসার উপর। এই কৃষি ক্ষেত্রের উপর ভিত্তি করে বর্তমানে জীবিকা গড়ে উঠেছে, দারিদ্রতা দূর হচ্ছে, পাশাপাশি মানব সম্পদ উন্নয়ন ও খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের অনেক ফলমুল, শাকসবজি উৎপাদন হলেও সঠিক প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ এর অভাবে তা পুরোপুরি অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারছেনা। তাছাড়াও প্রায় অধিকাংশ কৃষিজাত পণ্য সময়ভিত্তিক হওয়ায় সারাবছর এসব পণ্যের যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না । ফলে এ ধরনের পণ্য সংরক্ষণ জরুরী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কাঁঠাল, কলা ও টমেটো  উৎপাদন যে ভাবে বেড়েছে, সেভাবে দেশে এসব ফসলের ভ্যালু যোগ করা সম্ভব হচ্ছে না, বরং হলেও তা সীমিত  আকারে চলমান রয়েছে। উত্তর বঙ্গে বিশেষ করে, বগুড়া ও  ঢাকার কাছাকাছি গাজীপুর এসব ফসলের চাষাবাদ হলেও ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ তারা সরাসরি কাঁচা/ পাকা অবস্থায় ফরিয়া/ মধ্যভোগীর কাছে বিক্রি করছে। এসব কৃষকের প্রক্রিয়াজাতকরণ সম্পর্কে ধারনা না থাকায় ন্যায্য মূল্য যেমন পাচ্ছে না তেমনি তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে অধিক  জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রক্রিয়াজাতকরণ মডেল গড়ে তুলতে হবে এবং তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রথমত ট্রেসবিলিটি ম্যানেজমেন্ট ও নিরাপদ ফসল উৎপাদন করতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষন দিতে হবে পরবর্তীতে এসব ফসল থেকে বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য তৈরী করে সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে হবে।এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সার্ক ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, ভূটান সার্কভূক্ত আটটি দেশের এই প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং বাংলাদেশের পক্ষে পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়া তা বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পেরর সার্বিক পরামর্শ ও সমন্বয়কারী হিসেবে সার্ক কৃষি কেন্দ্র, ঢাকা কাজ করে যাচ্ছে।

অপচয় রোধে উদ্যোগ ঃ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশেষ করে ভ্যাকুয়াম ফ্রাইং মেশিন ব্যবহার করে উপকার ভোগীদের উৎপাদিত কাঁঠাল ও কলা থেকে পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্য রেখে চিপস্ তৈরী হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে খাদ্যের গুণগত মান অক্ষুন্ন থাকে এবং সরাসরি বিক্রির চেয়ে কৃষক লাভবান হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের বগুড়া জেলা ও গাজীপুর জেলায় সর্বমোট ১০০ জন উপকারভোগী রয়েছেন। তাদের ইনপুট ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলা হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপ- প্রকল্প এরিয়াতে ২টি এগ্রো- প্রসেসিং শেড নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে কৃষক উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ গ্রুপ কাজ করে যাচ্ছে। পাশপাশি মেশিনারী ব্যবহার করে ভ্যালু এডেড প্রোডাক্ট তৈরী করে বিপনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে বিএসটিআই এর অনুমোদন সাপেক্ষে বাজারজাতকরণ করা হবে। প্রকল্পের উপকারভোগীদের মধ্যে কমপক্ষে ৭৫% কে নতুন টেকনোলজি ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তোলা হচ্ছে  এতে শস্যের পোস্ট হারভেষ্ট লস ১০% কমবে এবং তাদের আয় ১৫% বৃদ্ধি পাবে।

বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ বিভিন্ন ধরনের চিপস্ তৈরির গবেষনা চলছে এবং এ বিষয়ে আমাদের কিছু পরামর্শ দিয়ে  চলছেন। ভ্যাকুয়াম ফ্রাইং মেশিন কম তাপমাত্রা ও বেশী প্রেশার ব্যবহার করে এবং পাশাপাশি ডি-অয়লিং পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে চিপস্ এর সংরক্ষণ মেয়াদকাল বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে এসব কৃষি পণ্যের মৌসুমে সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে সারা বছর চিপস্ তৈরী করে কৃষকগণ স্বাবলম্বী হতে পারবে। এই মেশিন ব্যবহার করলে ১০ কেজি কাঁঠালের কোষ থেকে প্রায় ৩-৩.৫ কেজি চিপস্ পাওয়া যায় যা খুবই লাভজনক। এ ব্যাপারে কারো আগ্রহ থাকলে প্রকল্প অফিসে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়।

 প্রকল্পে কার্যক্রম সম্পর্কে বাংলাদেশ এর পক্ষে বাস্তবায়নকারী সংস্থা আরডিএ, বগুড়া’র সহকারী পরিচালক ও প্রকল্প ফোকাল পারসন মোঃ আব্দুল আলিম বলেন, বাংলাদেশে প্রচুর কাঁঠাল, কলা ও টমেটোর চাষাবাদ হয় কিন্তু বাংলাদেশে কৃষকগণের মাঝে প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ সম্পর্কে ধারনা কম এবং দ্রুত বিক্রি করে টাকা আয় করতে চায় এতে করে মধ্যস্বত্ব ভোগীরা বেশী লাভবান হয়। কৃষককেরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে জানলে তাদের অবস্থার উত্তরণ করা সম্ভব ও তিনি সার্ক ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, ভূটান, সার্ক কৃষি কেন্দ্র, ঢাকা ও আরডিএ -বগুড়াকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান এ ধরণের ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন প্রকল্পের দায়িত্ব প্রদান করার জন্য প্রকল্পের কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পরামর্শ প্রদান করছেন ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মনিরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক, আরডিএ, বগুড়া। এই প্রকল্পের পরামর্শক ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর পরিচালক (খামার প্রযুক্তি, সেচ ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ) মো: ফেরদৌস হোসেন খাঁন বলেন,কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল এবং এর উৎপাদন খুবই বেশী তবে তা নির্দিষ্ট মৌসুমে। এই ফলটি ওজনে ভারী হওয়ায় পরিবহন খরচ বেশি যার কারনে কৃষক রাজধানী সহ বিভিন্ন মেগা শহর গুলোতে পাঠাতে পারেন না। তবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে যে ভ্যালু এডিশন করা হচ্ছে তাতে এর অবচয় যেমন রোধ হবে, পাশাপাশি সারাবছর এটি থেকে উৎপাদিত পন্য বাজারে পাওয়া যাবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতে কাঁঠালের চিপস খুবই জনপ্রিয়। আমরা যদি এই টেকনোলজি স্থানীয় ভাবে তৈরী করে কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি তবে কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।

পল্লী উন্নয়ন একাডেমী বগুড়া’র সুযোগ্য মহাপরিচালক ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব জনাব মোঃ আমিনুল  ইসলাম বলেন, সারা বাংলাদেশে যে পরিমান কাঁঠাল, কলা ও টমেটো উৎপাদন পরবর্তী নষ্ট হয় তা এই টেকনোলজী ব্যবহারে অনেকাংশে কমে যাবে, কৃষক ন্যায্য মূল্য পাবে এবং অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। তাই জরুরী ভিত্তিতে এই গবেষণা প্রকল্পটি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নীতি নির্ধারক মহলকে দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

#বার্তা প্রেরকঃ শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর ও সভাপতি, হাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি ইমেইল:abmannan291@gmail.com

Exit mobile version