কৃষিসংবাদ

কুচিয়া মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল

কুচিয়া মাছের প্রজনন

কুচিয়া মাছের প্রজনন

কৃষি সংবাদ ডেস্কঃ

কুচিয়া মাছের প্রজনন ঃ সাপের মত দেখতে হলেও কুচিয়া একটি মাছ। কুচিয়া মাছ বাংলাদেশে কুইচ্চা, কুঁইচা, কুঁচে, কুঁচো ইত্যাদি নামে পরিচিত। কুচিয়ার ফুলকা বিলুপ্ত তবে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য মাথার দুইপাশে থলে আকৃতির অঙ্গ রয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে কুচিয়া মাছকে আঁইশবিহীন মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে ইহার গায়ে ক্ষুদ্রাকৃতির আঁইশ বিদ্যমান যার বেশীরভাগ অংশই চামড়ার নীচে সজ্জিত থাকে। যে কোন প্রতিকূল পরিবেশে যেমন, স্বল্পমাত্রায় অক্সিজেন, উচ্চ তাপমাত্রা এরা সহ্য করতে পারে এবং কম গভীর জলাশয়ে সহজেই বাস করতে পারে। চিংড়ি ও কাঁকড়ার পরেই কুচিয়া রপ্তানির সম্ভাবনা উজ্জল। বিভিন্ন জরিপের ভিত্তিতে জানা যায় যে, বাংলাদেশে চার প্রজাতির কুচিয়া পাওয়া যায় এবং তার মধ্যে ৩ প্রজাতির কুচিয়া বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। রপ্তানিকৃত তিন প্রজাতির কুচিয়ার মধ্যে মাড ঈল, গড়হড়ঢ়ঃবৎঁং পঁপযরধ অন্যতম। প্রতি বছর এই প্রজাতির কুচিয়া প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে আহরণ করে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, থাইল্যান্ড, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে কুচিয়া আদিবাসি ও ক্ষুদ্রনৃত্তাত্বিক গোষ্টির কাছে জনপ্রিয় খাদ্য। এই মাছের বায়ুথলি তাজা বা শুকনা অবস্থায় খেলে এজমা এবং বাত জ্বর আর বাড়ে না। কুচিয়া মাছের সুপ বা মাংশের সাথে বিভিন্ন ধরণের ভেজষ মিশিয়ে রান্না করে খেলে এনিমিয়া, পাইলস ইত্যাদি রোগ সেরে যায়। এছাড়া পুষ্টিমান বিবেচনায় কুচিয়া মাছে পুষ্টির পরিমাণ অন্যান্য মাছের তুলনায় বেশী। ভক্ষণযোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম কুচিয়া মাছে প্রায় ১৮.৭ গ্রাম প্রোটিন, ০.৮ গ্রাম চর্বি, ২.৪ গ্রাম কার্বহাইড্রেট, ১৪০০ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন, ১৮৫ গ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে। এছাড়া ১০০ গ্রাম কুচিয়া মাছ ৩০০ কিলো ক্যালরির বেশী খাদ্য শক্তির যোগান দিতে পারে। কুচিয়া মাছ বাংলাদেশে জনপ্রিয় না হলেও আর্ন্তজাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদার কারণে এই মাছের বাণিজ্যিক মূল্য অনেক।

কুচিয়া মাছের প্রজনন কৌশল

কুচিয়া মাছ বছরে একবার মাত্র প্রজনন করে থাকে। প্রজনন মৌসুমে সাধারণত: স্ত্রী কুচিয়া মাছের গায়ের রং গাঢ় হলুদ বর্ণের এবং পুরুষ কুচিয়া মাছ কালো বর্ণের হয়ে থাকে। যেহেতু কুুচিয়া মাছ লিঙ্গ পরিবর্তন করতে সক্ষম তাই শুধুমাত্র বাহ্যিক বর্ণের ওপর ভিত্তি করে পুরুষ এবং স্ত্রী কুচিয়া মাছকে আলাদা করা সম্ভব নয়। প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী কুচিয়া মাছের জননাঙ্গ কিছুটা স্ফীত এবং ডিম ধারণ করার কারণে পেটের দিক যথেষ্ট ফোলা থাকে। পুরুষ কুচিয়া মাছ স্ত্রী কুচিয়া মাছের তুলনায় আকারে ছোট হয়ে থাকে। প্রকৃতিতে ২০০-৪০০ গ্রাম ওজনের কুচিয়া মাছ পরিপক্ক হয়ে থাকে এবং গড়ে ২৫০-৬৫০টি ডিম ধারণ করে। কুচিয়ার ডিম কমলা বর্ণের ও আঠালো হয়, অর্থাৎ একটির সঙ্গে অপরটি ভুট্টার দানার মত লেগে থাকে। কুচিয়ার ডিম একসাথে পরিপক্ক হয় না বলে একবারে সব ডিম ছেড়ে দেয় না। পর্যায়ক্রমে ১-২ মাসের মধ্যে সব ডিম ছেড়ে দেয়। এপ্রিল মাসে শেষ সপ্তাহ থেকে জুন মাসের ১ম সপ্তাহ পর্যন্ত কুচিয়া মাছ প্রজনন করে থাকে। এরা নিজেদের তৈরী গর্তে ডিম দেয় এবং সেখানেই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এই সময় মা কুচিয়া খুব কাছে থেকে ডিম পাহাড়া দেয় এবং বাবা কুচিয়া আশপাশেই অবস্থান করে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়া থেকে শুরু করে ডিম্বথলি নি:শেষিত না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চাগুলোকে মা কুচিয়া শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

ব্র“ড প্রতিপালন পুকুর প্রস্তুুতকরণ– পুকুরের আয়তন ৩-১০ শতাংশ হলে ভাল। যেহেতু কুচিয়া মাটির অনেক নীচ পর্যন্ত গর্ত করে এক পুকুর থেকে অন্য পুকুরে চলে যায় সেহেতু নির্ধারিত পুকুরে কুচিয়াকে রাখার জন্য পুকুরের তলদেশ এবং পাড় পাকা করলে ভাল নতুবা গ্লাস নাইলনের নেট বা রেক্সিন অথবা মোটা পলিথিন দিয়ে পুুকুরের তলদেশ এবং পাড় ঢেকে দিতে হবে। গ্লাস নাইলনের নেট বা রেক্সিন বা মোটা পলিথিনের উপর কমপক্ষে ২-৩ ফিট মাটি দিতে হবে। পুকুরের একপাশে কম্পোস্টের স্তুুপ অথবা সারা পুকুরে ১ ইঞ্চি পরিমান কম্পোস্ট দিতে হবে। পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমানে কচুরীপানা থাকতে হবে, বিশেষ করে প্রজনন মৌসুমে পুকুরের ৩/৪ ভাগের বেশী পরিমানে কচুরীপানা থাকতে হবে। যেহেতু কুচিয়া কম গভীরতা সম্পন্ন পুকুর বা বিলে পাওয়া যায় তাই তাদের উপযোগী পরিবেশ তৈরীর লক্ষ্যে প্রজননকালে পানির গভীরতা সর্বোচ্চ ১ ফুট পর্যন্ত রাখা উত্তম।

ব্র“ড কুচিয়া মাছ সংগ্রহ ও পরিচর্যা– প্রজননের জন্য প্রাকৃতিক উৎস থেকে সুস্থ সবল ও রোগমুক্ত কুচিয়া সংগ্রহ করে তিন মাস (জানুয়ারি-র্মাচ) পুকুরে পরিচর্যার মাধ্যমে ব্র“ড কুচিয়া তৈরী করা হয়। সংগৃহিত ব্র“ড কুচিয়াকে নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো জন্য হ্যাচারিতে বা পুকুরে হাপায় রেখে ৫-৭ দিন পরিচর্য়া করতে হবে। আহরণ পদ্ধতির জটিলতার কারণে সংগৃহিত অধিকাংশ কুচিয়ার মুখে আঘাত থাকে। এছাড়া সংগ্রহকারীরা দীর্ঘদিন অধিক ঘনত্বে চৌবাচ্চায় বা ড্রামে মজুদ রাখে বিধায় পেটের নিচের দিকে ঝোপ ঝোপ রক্ত জমাট বাঁধা অবস্থায় থাকে। আঘাত প্রাপ্ত বা শরীরে রক্ত জমাট থাকা ব্র“ড কুচিয়াকে আলাদা করে আঘাতের পরিমান বিবেচনা করে ০.২-০.৫ মিলি. এন্টিবায়োটিক- রেনামাইসিন প্রয়োগ করতে হবে। স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে প্রয়োজনে একই হারে ২য় বার এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। সুস্থ সবল ব্র“ড কুচিয়ার পুরুষ এবং স্ত্রী সনাক্ত করার পর ১৫০-২৫০ গ্রাম ওজনের পুরুষ কুচিয়া এবং ২৫০-৩৫০ গ্রাম ওজনের স্ত্রী কুচিয়া মাছকে প্রস্তুুতকৃত পুকুরে ১ঃ২ অনুপাতে শতাংশে ৩০টি করে মজুদ করতে হবে।

ব্র“ড কুচিয়া লালনকালে খাদ্য হিসেবে জীবিত মাছ ও শামুক সরবরাহের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। ১০০ গ্রাম সম্পূরক খাদ্যে মাছের মন্ড (৫০%), চেওয়া শুটকী থেকে প্রস্তুতকৃত ফিসমিল (৪০%), কুঁড়া (৫%) এবং আটা (৫%) দিতে হবে। কুচিয়া নিশাচর প্রাণি বিধায় প্রতিদিন সন্ধার পর নির্ধারিত ট্রেতে খাদ্য প্রয়োগ করা উত্তম।

কুচিয়ার পোনা সংগ্রহ– প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী হলে মে-জুন মাসের মধ্যে ব্র“ড প্রতিপালন পুকুর থেকে পোনা সংগ্রহ করা সম্ভব। মূলত: ডিম্বথলি নি:শোষিত হওয়ার পর পোনাগুলো বাবা-মায়ের আশ্রয় ছেড়ে কচুরীপানার শিখরে উঠে আসে এবং সেখানে খাদ্যের সন্ধান করে। মে মাসের ১ম সপ্তাহে কিছু পরিমানে কচুরীপানা উঠিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। পোনা প্রাপ্তি নিশ্চিত হলে প্রাথমিকভাবে গ্লাস নাইলনের তৈরী হাপার মাধ্যমে কচুরীপানা সংগ্রহ করে পুকুর পাড়ে বা সমতল স্থানে উঠিয়ে আনতে হবে। এ সময় ১৫-২০ মিনিটের জন্য হাপার মুখ হালকাভাবে বেঁধে রাখতে হবে। অতপর হাপার বাঁধন খুলে আলতোভাবে উপর থেকে কচুরীপানা ঝেড়ে ঝেড়ে সরিয়ে ফেলতে হবে। ইতোমধ্যে জমা হওয়া পোনাগুলোকে সংগ্রহ করে প্রাথমিকভাবে হ্যাচারিতে বা পুকুরে পূর্ব থেকে স্থাপিত গ্লাস নাইলনের হাপায় মজুদ করতে হবে। যেহেতু সকল মাছ একই সময়ে পরিপক্ক হয় না তাই মে মাসে কচুরীপানা থেকে পোনা সংগ্রহের পর পর্যাপ্ত পরিমানে কচুরীপানা পুকুরে পুনরায় দিতে হবে। ১৫ দিন অন্তর অন্তর কচুরীপানা পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং একই পদ্ধতিতে পোনা সংগ্রহ করতে হবে।

পোনা লালন-পালন– কুচিয়ার পোনা স্টীলের ট্রে বা সিমেন্টের চৌবাচ্চায় বা পুকুরে গ্লাস নাইলনের হাপায় লালন-পালন করা যায়। ট্রে বা চৌবাচ্চা বা হাপা আয়তাকার বা বর্গাকার হতে পারে। সাধারণত মাছের ক্ষেত্রে ৩টি অর্থ্যাৎ রেণু পোনা, ধানী পোনা এবং অঙ্গুলি পোনা পর্যায়ে পৃথক পৃথক ভাবে পরিচর্যা করা হয়ে থাকে। কুচিয়ার পোনাও ৩টি ধাপে প্রতিপালন করতে হয়। ট্রে বা চৌবাচ্চায় বা হাপায় কুচিয়ার পোনা লালন-পালনের ক্ষেত্রে ওজনের ওপর ভিত্তি করে ধাপে ধাপে খাদ্য পরিবর্তন করতে হবে। কুচিয়া অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ পছন্দ করে বিধায় প্রতিটি ধাপে পোনা মজুদের পর পরই ঝোপালো শিকড় যুক্ত কচুরীপানা কিছু পরিমানে সরবরাহ করতে হবে। যেহেতু ১ম ও ২য় ধাপের পোনার আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে, সেহেতু কচুরীপানা সংগ্রহ করে সহজেই পোনা নমূণায়ন করা সম্ভব। কুচিয়া মাছ স্বপ্রজাতিভোগী প্রাণি বিধায় প্রতিটি ধাপে স্বাস্থ্য পরীক্ষাকালীন সময়ে অপেক্ষাকৃত ছোট এবং দুর্বল পোনাগুলোকে আলাদা করতে হবে।

১ম ধাপে কুচিয়া পোনা প্রতিপালন- ডিম্বথলি নি:শেষিত হওয়া কুচিয়া পোনাকে বেবি কুচিয়া বা গ্লাস ঈল বলা হয়। বেবি কুচিয়ার গায়ের রং গাঢ় বাদামী বা কালো বর্ণের হয়। এই পর্যায়ের পোনা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গ মিটারে ৪০০-৫০০টি কুচিয়ার পোনা মজুদ করা যায়। বেবি কুচিয়া মজুদের পর পর্যাপ্ত পরিমানে জুপ্লাংটন সরবরাহ করতে হবে এবং বেবি কুচিয়া মজুদের ২-৩ দিন পর সম্ভব হলে রাঁজপুঁটি অথবা যে কোন মাছের সদ্য প্রস্ফুটিত রেণু সরবরাহ করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। তবে জুপ্লাংটন সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে। ৩-৪ দিন অন্তর অন্তর পোনার স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করে অপেক্ষাকৃত ছোট পোনাগুলোকে আলাদা করতে হবে।

২য় ধাপে কুচিয়ার পোনা প্রতিপালন– সাধারনত: ১০-১৫টি কুচিয়ার পোনার ওজন ১ গ্রাম হলে এই পর্যায়ের অর্ন্তভূক্ত হবে। এই ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে ১৫০-২০০টি কুচিয়ার পোনা মজুদ করা যায়। এই পর্যায়ে পোনাকে জীবিত টিউবিফেক্স সরবরাহ করতে হবে। এজন্য ট্রে বা চৌবাচ্চায় টিউবিফেক্সের বেড তৈরী করতে হবে। তবে হাপায় পোনা লালন-পালনের ক্ষেত্রে টিউবিফেক্স কুচি কুচি করে কেটে সরবরাহ করতে হবে। এই সময় ৫-৭ দিন পর পর পোনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে অপেক্ষাকৃত ছোট পোনাগুলোকে আলাদা করতে হবে।

৩য় ধাপে কুচিয়ার পোনা প্রতিপালন– সাধারনত: ৪-৫ গ্রাম ওজনের পোনা এই পর্যায়ের অর্ন্তভূক্ত হবে। এই ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে ৭৫-১০০টি কুচিয়ার পোনা মজুদ করা যায়। এই পর্যায়ে খাদ্য হিসেবে জলজ পোকা (হাঁস পোকা) জীবিত বা মৃত অবস্থায় সরবরাহ করা যেতে পারে। পাশাপশি সম্পূরক খাদ্য হিসেবে পোনার দেহ ওজনের ১০-১৫% পর্যন্ত মাছের কিমা সন্ধ্যার পর সরবরাহ করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। তবে এই সময় ট্রে বা চৌবাচ্চায় এটেল বা দেঁ-আশ মাটি দিয়ে পুকুরের ন্যায় পাড় তৈরী করে প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করলে কুচিয়া স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। বাজার উপযোগী কুচিয়া উৎপাদনের জন্য পোনার ওজন ১৫-২০ গ্রাম হলে ব্র“ড প্রতিপালনের ন্যায় একই পদ্ধতিতে প্র¯ু‘তকৃত পুকুরে মজুদ করতে হবে।

স্টিলের ট্রেতে পোনা পালন– আয়তাকার ট্রেতে পোনা নাসিং করলে ব্যবস্থাপনায় সুবিধা হয়। এক্ষেত্রে ট্রের আকার দৈর্ঘ্য ১.২৫ মি., প্রস্থ ০.৭৫ মি. এবং গভীরতা ০.১৫ মি. হলে ভাল। গবেষণা প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে দেখা যায় কুচিয়ার পোনা নাসিং ৪৫-৬০ দিন হলে ভাল হয়। ট্রেতে নাসিং করার আগে ট্রের মধ্যে মাটির স্তর (৪-৫ ইঞ্চি), পানি ও কচুরীপানা দিয়ে পোনার জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে নিতে হবে। ট্রের মধ্যে পানির গভীরতা হবে ০.২৫ ফুট। ছোট অবস্থায় কুচিয়ার পোনার জন্য জলজ উদ্ভিদ বিশেষ করে কচুরীপানা একটি ভাল সাবসট্রেটাম হিসেবে কাজ করে। কুচিয়ার পোনা কচুরীপানার শিকড়ের মধ্যে লেগে থাকে। তাছাড়া কচুরীপানা থাকলে পানি ঠান্ডা থাকে। ট্রেতে অক্সিজেনের প্রাপ্যতার জন্য সার্বক্ষণিক প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে পানির ঝরনার ব্যবস্থা রাখতে হবে। ট্রেতে প্রতি বর্গমিটারে ৭৫-১০০ টি কুচিয়ার পোনা মজুদ করলে পোনার বৃদ্ধি ভাল পাওয়া যায়। পোনার খাবার হিসেবে জু-প্লাংটন ও কেঁচোর কিমা উত্তম খাবার। এ সময় পোনার দেহ ওজনের ৫০-২০% হারে প্রতিদিন ২ বার (সকাল ও সন্ধ্যায়) খাবার প্রয়োগ করতে হবে।

সিমেন্টের চৌবাচ্চায় পোনা পালন– আয়তাকার সিমেন্টের চৌবাচ্চায় (দৈর্ঘ ২.৫ মি., প্রস্থ ১.৫ মি.ও গভীরতা ০.৭৫ মি.) কুচিয়ার পোনা নাসিং করা সুবিধাজনক। চৌবাচ্চায় নাসিং করার ক্ষেত্রে ট্রের মতো কাদা মাটির ¯তর (৫-৬ ইঞ্চি), পানি ও কচুরীপানা দিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে নিতে হবে। চৌবাচ্চায় পানির গভীরতা হবে ০.৪ ফুট। প্রতি বর্গমিটারে ১৫০-২০০ টি কুঁচিয়ার কুচিয়ার পোনা মজুদ করলে পোনার বৃদ্ধি ভাল হয়।

পরামর্শ

 প্রজননের জন্য ব্যবহৃত পুকুর ও চৌবাচ্চার মাটি অবশ্যই এটেল-দোঁআশ হতে হবে, এ মাটিতে কুচিয়ার গর্ত তৈরীতে সুবিধা হয়
 ট্রে বা চৌবাচ্চায় বা হাপায় পোনা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে কচুরীপানা অল্প পরিমাণে দিতে হবে
 কচুরীপানার পরিমান বেশি হলে নাইট্রোজেনের আধিক্যের কারণে পোনার মৃত্যুহার বেড়ে যেতে পারে
 ব্র“ড কুচিয়া মাছের পুকুরে জোঁকের আক্রমণ যাতে না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। জোঁকের আক্রমণ হলে প্রার্দুভাবের ওপর ভিত্তি করে পুকুরে পানি কমিয়ে শতাংশে ২৫০-৩৫০ গ্রাম লবন প্রয়োগ করে ৭-৮ ঘন্টা পর পানি সরবরাহ করতে হবে
 টিউবিফেক্সের বেড তৈরী করে পোনা প্রতিপালন করলে সমআকারের পোনা পাওয়া যায় এবং এতে পোনার বেচে থাকার হারও অনেক বেশি
 কোনভাবেই টিউবিফেক্সের বেডে জীবিত হাঁসপোকা সরবরাহ করা যাবে না।
 নার্সিং এর সময় কুচিয়ার পোনার আকার ছোট-বড় লক্ষ করা যায়। তাই এ সময় ছোট পোনাগুলো সরিয়ে অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে, নইলে বড় পোনা ছোট পোনাকে খেয়ে ফেলবে।

Exit mobile version