কৃষিসংবাদ

চট্টগ্রামে ক্ষেতের টমেটো ক্ষেতেই নষ্ট হয়: ক্ষতিগ্রস্থ চাষিরা

চট্টগ্রাম অঞ্চলে টটমেটো নষ্টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে এবার। বাজারে চাহিদাও আছে। কিন্তু আড়তে বিক্রি করে পরিবহন খরচও ওঠছে না। ফলে ক্ষেত থেকেই টমেটো তুলছেন না কৃষক। ক্ষেতের টমেটো ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে সবজি ক্ষেতের এমনই চিত্র এখন। এলাকায় হিমাগার না থাকায় কৃষকের কষ্টের ফসল পচে যাচ্ছে মাঠেই। অথচ আগামী একমাস পর টমেটো বিক্রি হবে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন  বলেন, ‘গত একমাস ধরে আড়তে টমেটো বিক্রি হয় কেজি ৫-৬ টাকায়। গত সপ্তাহ থেকে বিক্রি করছি ৩-৪ টাকায়। বাজারে দাম এতটাই কম যে, কৃষক টমেটো তুলতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন।’ সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামে সবজির বৃহত্তম আড়ত রিয়াজউদ্দিন বাজারে সবচেয়ে বেশি টমেটো আসে কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও আনোয়ারা এবং উত্তরের সীতাকুণ্ড থেকেও আসে টমেটো। নগরের আশপাশ এলাকা ছাড়া দূর এলাকা থেকে টমেটোসহ অন্য সবজি এখন রিয়াজউদ্দিন বাজারে আসছে না। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী মহসিন সওদাগর বলেন, ‘গাড়িভাড়া বেশি হওয়ায় চকরিয়া থেকে ব্যবসায়ীরা টমেটো চট্টগ্রামে আনলেও পরিবহন খরচই ওঠছে না! এ কারণে চকরিয়া থেকে টমেটো এখন আর আসছে না। নগরের আশপাশের এলাকার টমেটো বাজারের চাহিদা মিটাচ্ছে।’ বিষয়টির সত্যতা মেলে চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদী তীরবর্তী সবজি ক্ষেতে। বিপুল পরিমাণ টমেটো ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় তরুণ আরশাদ এম সোহান বলেন, ‘এবার আগাম টমেটো যাঁরা আবাদ করেছেন, তাঁরা ভালো ফলন পেলেও বন্যায় বিধ্বস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সঠিক দাম পাননি। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলেও দাম নেই।’ কৃষক আমির মোহাম্মদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে ব্যবসায়ীরা এখন ক্ষেতে সবজি কিনতে আসছেন না।

এতে দাম এতটাই কমে গেছে পাইকারিতে কেজি দুই টাকা দরেও টমেটো কেউ কিনছেন না। তাই ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে ছয় কিলোমিটার দূরে চকরিয়ায় আড়তে নিলেও ভ্যানভাড়ার খরচও ওঠে আসে না। এ অবস্থায় স্থানীয় বাজারে নামমাত্র দামে বিক্রি করে দিচ্ছি কিছু টমেটো।’ চকরিয়া কৃষি অফিস জানায়, চকরিয়ায় শুধু শীতকালীন টমেটোর আবাদ হয়। গ্রীষ্মকালীন কিংবা বর্ষাকালীন চাষাবাদ হয় না। এবার উপজেলার ৬৪০ হেক্টর জমিতে ২৫ হাজার ৮০০ টন টমেটোর ফলন হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ফলন ৪০ মেট্রিক টন।’ ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষকের আর্থিক ক্ষতির হিসাব উপজেলা ও ইউনিয়নের কৃষি কর্মকর্তা কিংবা কৃষি অফিসের কাছে নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ  বলেন, ‘ক্ষেতে টমেটো নষ্ট হওয়ার তথ্য আমার কাছে নেই।’ পরে চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের তথ্য দিলে তিনি বলেন, ‘যাঁরা দেরিতে টমেটো চাষ করেছেন, তাঁরা হয়তো সঠিকভাবে বাজারজাত করতে না পারায় ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। তবে আগাম যাঁরা করেছেন তাঁরা ভালো দাম পেয়েছেন। এ জন্য এখানে আমরা আগাম চাষ এবং একটি হিমাগার স্থাপনের জন্য চিঠি দিয়েছি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে।’

তবে সরকারিভাবে হিমাগার স্থাপনের কোনো পরিকল্পনার কথা জানা নেই চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আমিনুল হক চৌধুরীর। তিনি বলেন, ‘শীতকালীন মৌসুমে প্রাথমিক হিসাবে চট্টগ্রামে ৫০ হাজার টন টমেটো উত্পাদিত হয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ টমেটোর চাহিদা একসঙ্গে না থাকায় দাম কমে গেছে। এ জন্য বেসরকারি উদ্যোগে হিমাগার স্থাপন করতে অনেককেই বলেছি।’ ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শুধু প্রযুক্তি দিয়ে উত্পাদন বাড়ার কৌশল নেয়। প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করে না। ফলে সেটি নিয়ে আমাদের ভাববার সুযোগ কম।’ যোগ করেন আমিনুল হক চৌধুরী। এদিকে ব্যবসায়ীরা জানান, উত্পাদন না থাকায় একমাস পরই বাজারে টমেটোর সংকট সৃষ্টি হবে। জুন মাসে রমজান শুরুর আগে হু হু করে বাড়বে টমেটোর দাম। তখন কেজি ১০০ টাকা দরেও কিনতে বাধ্য হন ক্রেতারা। এমনকি চাহিদা মিটাতে ভারত থেকে আমদানি হয় টমেটো। অথচ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে হিমাগার স্থাপন করা গেলে কৃষকের প্রচুর কষ্টে উত্পাদিত টমেটোসহ সবজিগুলো ন্যায্য দাম পেত। আমদানির বদলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হত। টাটকা সবজি খেতে পারতেন ভোক্তারা। কালের কন্ঠ।।

Exit mobile version