কৃষিসংবাদ

জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩: কৃষি, খাদ্য ও মৎস খাতে ৩৩,৬৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে

বাজেট ২০২২-২৩ ঃ ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি, খাদ্য ও মৎস্য খাতে ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা বিদায়ী অর্থবছর ২০২১-২২ এ ছিল ২৪ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ২৪ হাজার ২২৪ কোটি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় পাচ্ছে ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ১ হাজার ৫০১ কোটি টাকা।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মৎস ও প্রাণিসম্পদ খাতে ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এরমধ্যে পরিচালন খাতে ১ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন খাতে ২ হাজার ৮১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ বৃহস্পতিবার সংসদে নতুন অর্থবছরের জন্য এই বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করেন।
গত অর্থবছরে এই খাতে বাজেটের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, সকলের জন্য নিরাপদ, পর্যাপ্ত ও মানসম্মত প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিতকরণ সরকারের একটি অন্যতম লক্ষ্য। বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। সরকারের মৎস্যবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং চাষি ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক ও লাগসই কারিগরি পরিষেবা প্রদানের ফলে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ৪৬.২১ লাখ মেট্রিক টন, যা ২০০৯-২০১০ সালের মোট উৎপাদনের চেয়ে ৫৯.৪০ শতাংশ বেশি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ৩য় ও বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম স্থানে। এছাড়া বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১ম এবং তেলাপিয়া উৎপাদনে বিশ্বে ৪র্থ ও এশিয়ার মধ্যে ৩য় স্থান অধিকার করেছে। বিশেষ সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টাশিয়ান্স ও ফিনফিস উৎপাদনে বাংলাদেশ যথাক্রমে ৮ম ও ১২তম স্থানে রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ইলিশ মাছের জন্য ভৌগোলিক নিবন্ধন সনদ (জিআই সনদ) পেয়েছে, যার ফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ইলিশ অধিকতর সমাদৃত হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সরকারের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সমুদ্রবিজয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত বিশাল জলরাশি দেশের সুনীল অর্থনীতি বিকাশের দ্বার উন্মোচন করেছে। সুনীল অর্থনীতির বিকাশ এবং সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও আহরণে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে আমরা ২০১৪ সালে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা প্রণয়ন করেছিলাম।
‘গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণে পাইলট প্রকল্প’ বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর ফলে সমুদ্র অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বরাদ্দের ঘোষণা দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সরকার মৎস ও মৎস্যজাত পণ্যের গুণগত ও সুরক্ষা মান নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমরা ‘ইলিশ মাছ ব্যবস্থাপনা কর্মপরিকল্পনা’ প্রণয়ন করেছি এবং এর বাস্তবায়ন শুরু করেছি। এই কর্মপরিকল্পনার অধীনে প্রজনন মৌসুমে সমুদ্রে বছরের ৬৫ দিন সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
এছাড়া প্রতি বছর নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত জাটকা ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। এ জন্য জেলে পরিবারগুলোকে ভালনারাবেল গ্রুপ ফিডিংয়ের (ভিজিএফ) মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হয়। এভাবে সরকার ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি বাড়াতে সক্ষম হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে যেখানে ইলিশ উৎপাদন ছিল ২ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন ২০২০-২১ অর্থবছরে সেটি বেড়ে ৫ দশমিক ৬৫ লাখ মেট্রিক টন হয়েছে।
প্রায় দুই দশমিক সাত লাখ চিংড়ির খামার এবং ৯ হাজার ৬৫১টি বাণিজ্যিক মাছের খামার মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির সুবিধার্থে অপারেটিং ট্রেসেবিলিটি সিস্টেমের অংশ হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছে।

—ইউএনবি

Exit mobile version