কৃষিসংবাদ

নকলায় ইদুঁর নিধন অভিযানে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া

ইদুঁর নিধন অভিযানে

মো. মোশারফ হোসেন, শেরপুর প্রতিনিধি:

ইদুঁর নিধন অভিযানে ঃ‘ঘরের ইদুর মাঠের ইদুর ধ্বংস করে অন্ন, সবাই মিলে ইদুর মারি ফসল রক্ষার জন্য’ এই প্রতিপাদ্যকে ধারন করে দেশব্যাপী চলেছে জাতীয় ইদুর নিধন অভিযান। এই ইদুর নিধন অভিযানের অংশ হিসেবে শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় চলছে ইদুর নিধন অভিযান কার্যক্রম।

উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যান সংস্থার সব কৃষক সদস্যরা দিনের অন্তত ২ ঘন্টা ইদুর নিধনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ওই সংস্থার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা গত বছর (২০১৭ সালে) এক দৈনিক পত্রিকা মারফত জানতে পারেন, কোন এক কৃষক সংগঠন সর্বোচ্চ সংখ্যক ইদুর মেরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক পুরুষ্কৃত হয়েছে। এটা দখে তারা উদ্বুদ্ধ হয়। পরবর্তী তাদের সাপ্তাহিক সভায় তারাও ইদুর নিধনের জন্য সর্বসম্মতীক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়। এর পর থেকেই শুরু হয় তাদের ইদুর নিধন কার্যক্রম। এভাবে নিধন চলতে থাকলে ইদুর নিধনে রেকর্ট করে ফেলবেন বলে মনে করেন সংস্থার সব কৃষক সদস্যরা ।

সংস্থার রেজিষ্ট্রারের তথ্য মতে, গত বছরের (২০১৭ সালের) আগষ্ট মাস থেকে ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যান সংস্থার সদস্যরা ইদুর নিধন শুরু করে চলতি নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১৬ হাজার ৬৫৪ টি ইদুর মেরে এলাকার কৃষকসহ সবার মনে আলোচনার জড় তুলেছেন। ওই সংস্থার সদস্যরা জানান, তাদের ইদুর নিধন কার্যক্রম দেখে সর্বসাধারন নিজে থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইদুর নিধনে অংশ নিয়েছেন। তারা আরও জানান, ইদুর নিধন করায় তাদের ফসলের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। দিনে ২ ঘন্টা করে ইদুর নিধনে ব্যস্ত থাকায় তাদের যে সময়টুকু ব্যয় হয়েছে, তাতে তাদের ফসল উৎপাদনে কোন ক্ষতিকর প্রভাব পড়েনি, বরং ফসল উৎপাদনের হিসেবে দিনে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা কাজ করার উপকার হয়েছে বলে তারা দাবী করছেন।

ইদুর নিধনের পরে ওইসব ইদুর ধ্বংস করার বিষয়ে সংস্থার সাধারন সম্পাদক হেলাল উদ্দিন জানান, ইদুর মারার পরে সংস্থার রেজিষ্ট্রারে দিন তারিখ উল্লেখ করে ইদুরের সংখ্যা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে রাখেন। তাদের সাপ্তাহিক সভায় এক সপ্তাহে যে কৃষক সদস্য সর্বোচ্চ সংখ্যক ইদুর মারেন তাকে সংস্থার পক্ষ থেকে স্বাদ্যানুযায়ী পুরষ্কৃত করা হয়। তাছাড়া ইদুর মারার বিষয়টি তথা নিধনকৃত ইদুরের সংখ্যা নিয়মিত উপজেলা কৃষি অফিসে জানান তারা। বিশেষ করে সদ্য বিদায়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর এবং কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ ও উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা আতিকুর রহমানকে জানিয়ে মৃত ইদুর গুলো মাটিতে পুতে রাখতেন বলে জানান, ওই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব মো. ছাইদুল হক।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যান সংস্থা’র সদ্য সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন জানান, তাদের সংস্থা শুধু কৃষিপণ্য উৎপাদন ও উন্নয়নেই কাজ করেন না, তারা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী মূলক কাজ করেও এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। দরিদ্র মেধাবীদের সহায়তা করা, কন্যা দায়গ্রস্থ বাবা-মা কে সহায়তা করা, রাস্তার পাশে ও মসজিদ মাদরাসার অঙ্গীনায় বিভিন্ন গাছ রোপন করা, শীতার্তদের মাঝে শীত নিবারনের কাপড় বিতরণসহ ন্যুনতম সহায়তা করার মত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী মূলক কাজ করে আসছেন তারা।

নবাগত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যান সংস্থার বছরব্যাপী ইদুর নিধন অভিযানের উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। তাদের দেখাদেখি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত কৃষক সংগঠনের সদস্যরাও ইদুর নিধনের কাজ হাতে নিয়েছেন বলে জানান মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাগন। ইদুর নিধনের জন্য ওই কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যান সংস্থার কৃষকদেরসহ উপজেলার অন্যান্য কৃষকদের মাঝে ইদুর মারার যন্ত্র বা বিষ টোপ বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ইদুর বছরে কৃষকদের যে পরিমাণ খাদ্য শস্য, শাক-সবজী ও গৃহস্থালী সামগ্রী নষ্ট করে, তা অকল্পনীয় ও অপূরনীয়। তাই কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ও ইদুর নিধন অভিযানে সব কৃষকদের সংশ্লিষ্ট করতে প্রতিবছর সরকারি ভাবে তথা কৃষি সম্প্রসাণ অধিদপ্তরের আয়োজনে কৃষকদের অংশ গ্রহনে জাতীয় ইদুর নিধন অভিযান পালন করা হয়। চলতি বছর বর্তমান মাসে ইদুর নিধন অভিযান চলেছে বলে তিনি জানান।

 

Exit mobile version