কৃষিসংবাদ

নার্সারী করে সফল দিনাজপুরের আব্দুর রহিম

দিনাজপুরের আব্দুর রহিম

Rana nursery

মোস্তাফিজুর রহমান

গাছের প্রতি ভালবাসা এবং দেশকে সবুজ করার প্রত্যয়ে ও বেকারত্বের করুণ পরিণতি হতে মুক্ত থাকার জন্য নার্সারী করে সফল হয়েছেন দিনাজপুরের আব্দুর রহিম। পরিবারের প্রয়োজন ও নিজের পায়ে দ্বাড়ানোর জন্য বেছে নিয়েছিলেন নার্সারীকে। তার বাসা দিনাজপুর সদর উপজেলার কালিতলায়। নার্সারীর নাম রানা নার্সারী।
যৌবনের শক্তি ও সাহুস কে কাজে লাগিয়ে গুটি গুটি অব্যহত পরিশ্রমে নার্সারী করে জীবনের গতি পাল্টায়ে দিয়েছেন তিনি।
এক সময়ের বেকার আজ সফল ব্যাক্তি ও সফল উদ্যক্তা আব্দুর রহিমের সাথে তার দীর্ঘ ৩০ বছর নার্সারী জীবনের নানা বিষয়ে আলাপ হয়েছে।

৩০ বছর আগে নিজের পায়ে দাড়ানোর জন্য যখন চাকরী বা কর্মসংস্থান দিকে ঝুকছিলেন তখন এক নার্সারী দেখে নার্সারী করার চিন্তা আসে মাথার মধ্যে। আর গাছের গুরুত্ব ও পরিবেশের উপর গাছের প্রভাবের কথা ভেবে অল্প কিছু লিচুর চারা দিয়ে শুরু করে নার্সারীর হাতে খড়ি। প্রথমবার বাসায় ১-২ হাজার লিচুর চারা তৈরি করেন। সেই সময়ে দিনাজপুরের খুব বেশি নার্সারী ও ছিলনা, তাই এই সুযোগে নিজেকে প্রতিষ্টিত করার স্বপ্নের বাস্তবায়ন শুরু করেন।

পরে সময়ের সাথে নিজের প্রয়োজনে কলম করা শিখে তা বাস্তবায়ন করে প্রচুর কলম তৈরি করেন। এতে করে বিভিন্ন প্রকার ফল ও ফুলের কলম বিক্রি করে ভাল লাভ করেন। আর মানুষকে উৎসাহ ও উদ্দিপনা দিত গাছ লাগানোর ব্যাপারে, দূর দুরান্ত হতে অনেক মানুষ চারা কিনতে এসেছে।

গাছের প্রতি ভালবাসায় ভারত সহ অনান্য এলাকা হতে নতুন নতুন ফলের চারা নিয়ে এসে কলম করতে থাকেন। তখন বিভিন্ন মেলায় গিয়ে প্রচুর চারা বিক্রি করেছেন বলেও সে দিনের কিছু সুখের স্মৃতিচারণ করেন তিনি।
সেই মহান মুক্তিযোদ্ধের সময় তার বাবা ও বড় ভাই মারা গিয়েছিল, তাই পরিবারের খরচ জোগাতে তারা দুই ভাই মিলে এই রানা নার্সারী নামে নার্সারীতে বিনিয়োগ করেন।
দেশের বিভিন্ন স্থান হতে সেখান থেকে উন্নত জাতের গাছ সংগ্রহ করে (বিশেষত যশোর হতে) নার্সারীতে রেখে পরিচর্যা করতেন। পরে তা সময়মত বিক্রি করেন।

তৎকালীন সময়ে ম্যাট্রিক পাশ করে তিনি তার নার্সারীতে মনোনিবেশ করেছিলেন। দীর্ঘ নার্সারী জীবনে যেমন অনেক দুঃসময় কেটেছে ঠিক তেমনি অনেক সুখের সময় ও কেটেছিল। সবচেয়ে বেশী আনন্দ দেয় এমন কিছু ঘটনা তিনি বলছিলেন এই ভাবে। আগে প্রচুর বৃক্ষ মেলা হত , প্রতিবছরই সরকারী উদ্যোগে তার আয়োজন হত, এবং মাস ব্যাপী ও হত কোন কোন স্থানে। নীলফামারীতে অনেক বড় মেলা হত প্রতিছর এক মাস মেয়াদী। সেখানো এমন ও অনেক দিন কেটেছে যেখানে লক্ষাধিক টাকার ও বেশি বিক্রি হত গাছ, একটু বসার সময়ও পাওয়া যেত না।

তবে বর্তমানে আর আগের মত অবস্থা নাই, কমেছে গাছ লাগার জায়গা মানুষের বসবাসের বাড়তি জায়গার প্রয়োজনে। এখন মানুষের সচেতনতা বেড়েছে, এর বিকল্প হিসেবে ছাদে বাগান করার প্রচেষ্টা প্রায়ই মানুষের মধ্যে দেখা যায়। একদিকে যেমন বিশুদ্ধ বাতাস ও নির্মল পরিবেশ পাবেন ঠিক পাশাপাশি সেই গাছ হতে প্রাপ্ত ফল আপনাকে প্রশান্তি দেয়ার সাথে কিছু অর্থ ও দিতে পারে। তাই এখন মানুষ দাম দিয়ে ভাল গাছ ক্রয় করে ছাদে বাগান করায় কিছুটা হলে নার্সারী ব্যস্থাটা টিকে আছে। তাছাড়া বানিজ্যিক ভাবে মাঠে বাগান করায় এটা বলবত আছে।
তিনি নিজের নার্সারীতে একটা শ্লোগান ব্যবহার করছেন তার তা হল- গাছ লাগান দুনিয়া ও আখিরাতে সওয়াব অর্জন করুন। মৃত্যুর পুর্বে হলেও গাছ লাগান।

বক্তিগত জীবনে তিনি এখন এক মেয়ের পিতা। গাছের এবং গাছ প্রেমীদের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে নার্সারী নিয়ে তিনি তার সংসার সচ্ছল ভাবেই পরিচালনা করছেন। তিনি সবাইকে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বেশি বেশী গাছ লাগার আহবান জানান।
সাক্ষাৎকার গ্রহণেঃ
মোস্তাফিজুর রহমান ও মুনিরুজ্জামান
শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক
‘হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,

কৃষির আরো খবরাখবর জানতে আমাদের পেইজে লাইকদিনঃ facebook.com/krishisongbad.com

Exit mobile version