কৃষিসংবাদ

শখের বসে লিচু ও ড্রাগন ফল চাষে লাখপতি পারুল বেগমের গল্প

ফল চাষে লাখপতি

মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) :

শখের ড্রাগন ও লিচু  ফল চাষে লাখপতি পারুল । বাগান হতে বছরে লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলাধীন বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বাউসা গ্রামের আকাব্বর আলীর স্ত্রী পারুল বেগম। বাড়ির আঙ্গীনায় এক একর জমিতে গড়ে তোলা তার শখের বাগান হতে লাভবান হচ্ছেন তিনি। তার বাগানে নানা প্রজাতির ফল ও সবজি থাকলেও ড্রাগন ও লিচুই হলো তার বাৎসরিক আয়ের প্রধান ফল। সরেজমিনে দেখাযায়, পারুলের বাগানে ড্রাগন, লিচু, লটকন, আম্রপালি, হাইব্রিড নারিকেল, পেয়ারা, লেবু, বারমাসী সজনা, ফেনকচু, বিলাতি ধনিয়া সহ ১৬-১৭ প্রজাতির ফল ও সবজি রয়েছে। এসব থেকেই খরচ বাদে বছরে লক্ষাধিক টাকা লাভ হয়। পারুলের সফলতা দেখে এলাকার অল্প জমির অনেক মালিক তার মতো বাগানে ঝুঁকছেন। নতুন করে কমপক্ষে আরও ১২ থেকে ১৫ টি বাগান গড়ে ওঠেছে ওই ইউনিয়নে। আর উপজেলাতে এমন বাগান আছে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ টি। ওইসব বাগানের মালিকরা সবাই আজ ফল চাষে লাখপতি পারুল বনে গেছেন।

যেভাবে ফল চাষে লাখপতি পারুল

টিকরাকান্দি গ্রামের হাতেম মন্ডলের ১০ ছেলে মেয়ের মধ্যে পারুল ষষ্ঠ সন্তান। বিশাল সংসারের খরচ চালাতে সবসময় হাতেম মন্ডলকে হিমশিম খেতে হতো। দিশেহারা হয়ে পারুলকে পঞ্চম শ্রেণি পাশের পরেই ১৪ বছর বয়সে বাউসা গ্রমের আকাব্বর আলীর সাথে বিয়ে দেন। তখন আকাব্বর আলীর অর্থনৈতিক অবস্থাও যা ছিল তা উল্লেখ করার মতো নয়। বিয়ের চার বছরের মাথায় তারা দুই সন্তানের বাবা-মা হয়ে যান। এ যেন মরার উপর খারার ঘা। খুব কষ্টে খেয়ে না খেয়ে চলছিল তাদের সংসার। ২০১০ সালে নকলা কৃষি অফিস হতে পারুলকে পারিবারিক ফলজ বাগান প্রকল্পের আওতায় একটি লিচু বাগান করতে কলম কাটা চায়না-৩ জাতের ৫০ টি গাছ দেওয়া হয়। ২ বছর পরেই সেই বাগানে ভালো ফলন হয়। তাতে পারুলের আগ্রহ বেড়ে যায়। তার আগ্রহ দেখে তৎকালীন নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন পারুলকে সার্বিক সহযোগিতা সহ পরামর্শ সেবা দিতে থাকেন। ২০১২ সালে তাকে ড্রাগনের কাটিং করা একটি মাত্র চাড়া দেওয়া হয়। বর্তমানে তার বাগানে ১২০ টি লিচু, ৩০ টি ড্রাগন, ২ টি বারমাসি সাজনা, ৮ টি লেবু, ৪ টি লটকন, ১০ টি কাগজি পেয়ারা, ৩৫ টি আম্রপালি সহ কমপক্ষে ৩৫০ টি বিভিন্ন জাতের ফলজ গাছ রয়েছে। পাশাপাশি বড় গাছের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে বিভিন্ন সবজি ও মসলা জাতীয় চাষ। তাছাড়া ড্রাগনের কাটিং করা চারা ও লিচুর কলম কাটা চারা বিক্রি করেও প্রতি বছর ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা তাদের আয় হয়। এবছর ৩০ টি ড্রাগন কাটিং ও ৩৫০ টি লিচুর কলম দিয়েছেন তারা। পারুল বলেন, এসবের কিছু নিজেরা লাগাবেন। বাকি গুলো বিক্রি করে দিবেন। ড্রাগন কাটিং প্রতিটি ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা করে এবং লিচু কলম প্রতিটি ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা করে বিক্রি করেন। ড্রাগন কাটিং ও লিচু কলম বিক্রির জন্য এপর্যন্ত ২৫ হাজার টাকা তারা ক্রেতাদের কাছে অগ্রীম নিয়েছেন। সেইসব থেকেই খরচ বাদে তাদের বছরে সোয়া লক্ষ টাকার বেশি লাভ থাকে। এই বাগানের আয় দিয়েই সংসার ও ছেলে মেয়ের শিক্ষা খরচ চালানোর পর অবশিষ্ট টাকায় ৪ টি গরু, টিনসেট একটি থাকর ঘর ও ৪০ শতাংশ জমি কিনেছেন। তার স্বামী আকাব্বর আলী বলেন, এখন বাজার জাত করার চিন্তা করতে হয়না। আশেপাশের লোকজন এবং পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যায়। আম, লেবু, লেচু পাকার আগেই পাইকাররা এসে বাগান সহ অগ্রিম টাকায় কিনে নেয়।

ওই এলাকায় কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম ও ইসমাতুন মাসুমা জাহান পলাশি বলেন, পারুল দম্পতি অপ্রচলিত ড্রাগন ফল, লিচু, আম্রপালি ও বারমাসী সবজির বাগানে সফলতা দেখিয়ে উপজেলায় মডেলে পরিণত হয়েছেন। আজ ফল চাষে লাখপতি পারুল হয়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর জানান, বাউসার পারুলকে কৃষি বিভাগের উধর্বতন কর্মকর্তারা নামসহ চিনেন। এর নেপথ্যে কারন শুধু পারুলের মেধা ও শ্রমে সফলতা। তিনি আরও বলেন পরিকল্পিত ভাবে শ্রম দিলে স্বাবলম্বী হতে বেশি জমির প্রয়োজন হয়না। তার উজ্জল প্রমাণ পারুলের পরিবার। তবে পারুল ও তার স্বামী জানান, তাদের সফলতার পিছনে উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের অবদান অনস্বীকার্য। তারা বলেন কৃষি অফিস উৎসাহ উদ্দীপনা, পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা না করলে হয়তো তাদের জীবনমান এতোটা উন্নত হতো না।

 

Exit mobile version