কৃষিসংবাদ

বেগুনের ক্ষতিকর পোকা মাকড় ও দমন ব্যবস্থা

উত্তর দিচ্ছেন কৃষিবিদ নূরুল হুদা আল মামুনঃ

প্রশ্ন: বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা  দমনের প্রতিকার কি?

শাজাহান খন্দকার, গোলাপগঞ্জ, সিলেট
উত্তর: বেগুন রোপনের ৪-৫ সপ্তাহ পরে এ পোকার আক্রমণ শুরু হয়। ডিম থেকে কীড়া গাছের নরম ও কচি ডগা ও পত্র বৃন্ত ছিদ্র করে ফলে ডগা ঢলে পড়ে এবং শুকিয়ে যায়। পরবর্তীতে বেগুন ফলে আক্রমণ করে। গ্রীষ্মকালে এ পোকা সক্রিয় বেশী হয়। দমনের জন্য সহনশীল জাতের চাষ করা যথা উত্তরা, নয়নতারা, সিংনাথ, কাঁটা বেগুন ইত্যাদি। ক্ষেত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা (মরা পাতা, আক্রান্ত ডগা সরিয়ে ফেলা)। ঘন ঘন বেগুন ক্ষেত পরিদর্শন করা। বছরের পর বছর একই জমিতে বেগুন চাষ না করা। সেক্স ফেরোমিন ফাঁদ ব্যবহার করে পুরুষ মথ ধরে নষ্ট করা। সুষম সার প্রয়োগ করা। বিশেষ করে পটাশ সার ব্যবহারে গাছের বালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। জৈব কীটনাশক ব্যবহার যথা নিমবিসিডিন ৪ মিঃ লিঃ/ ১ লিঃ পানি বা নিমের পাতা বা ফল দ্বারা তৈরী নির্যাস ৫-৬ গুণ পানি মিশিয়ে স্প্রে করা। শেষ ব্যবস্থা হিসাবে বালাইনাশক প্রতি লিটার পানিতে সাইপারমেথ্রিন (রিপকড, বাসথ্রিন, সবক্রিন ইত্যাদি) ১ মিলি, ডেসিস ০.৫-১ মিঃ লিঃ, কার্বোফুরান (৪ কেজি/একর), ডায়াজিনন বা সুমিথিয়ন ১.৫-২.০ মিঃ লিঃ ব্যবহার করা।

প্রশ্ন: পাতার জ্যাসিড বা শোষক পোকা  দমনের প্রতিকার কি?

লেমন আহমেদ, সাঘাটা, গাইবান্ধা
উত্তর: পূর্ণ বয়স্ক ও বাচ্চা উভয়ই ক্ষতি করে। চারা গাছ শুরুকরে শেষ পর্যন্ত এরা পাতার রস খায়। আক্রাšপাতা বিবর্ণ হয়। পাতা হলুদ হতে তামা রঙ হয় এবং পরে শুকিয়ে যায়। প্রতিকারের জন্য হাত জাল দ্বারা পোকা সংগ্রহ করা। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করা। ফাঁদ শস্য যেমন বেগুন ক্ষেতের চারিদিকে ঢেঁড়স লাগানো। আক্রান্ত গাছছাই ছিটানো। ০.৫% ঘনত্বের সাবান পানি অথবা ৫ মিলি তরর সাবান প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা। ক্ষেতে মাকড়সা সংরক্ষণ করা (১টি মাকড়সা গড়ে দিনে ২-১৫ টি জ্যাসিড শিকার করে খায়)। ৫০০ গ্রাম নিম বীজের শাঁস পিষে ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে তা ছেঁকে জ্যাসিড আক্রান্ত  ক্ষেতে স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে। পোকা দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ডায়মেথোয়েট ৪০ ইসি (রগর, টাফগর, সাগর, পারফেকথিয়ন) ১ মিঃ লিঃ, এডমায়ার ১ মিঃ লিঃ, মেটাসিস্টক্স ১ মিঃ লিঃ, সবিক্রন ১ মিঃ লিঃ, এসাটাফ- ১.৫ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করা।

প্রশ্ন: বেগুনের পাতা মোড়ানো পোকা  দমনের প্রতিকার কি?

মহিউদ্দিন জাহাঙ্গির, পবা রাজশাহী
উত্তর: এ পোকার কীড়া অবস্থায় পাতা মোড়ায় এবং সবুজ অংশ খায়। এটি সাধারণত কচি পাতাগুলো আক্রমণ করে থাকে। প্রতিকারের জন্য আক্রাšপাতা সংগ্রহ করে নষ্ট করা। ক্ষেত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। আক্রমণ বেশী হলে প্রতি লিটার পানিতে সুমিথিয়ন, ফলিথিয়ন-২ মিঃ লিঃ মিশিয়ে ভালভাবে স্প্রে  করতে হবে।

প্রশ্ন: বেগুনের ছাতরা পোকা  দমনের প্রতিকার কি?

লুতফর মোল্লা, ফুলতলা, খুলনা
উত্তর: এ পোকার পূর্ণ বয়স্ক ও বাচ্চা উভয়ই পাতা কান্ড ও ডগার রস চষে খায়। আক্রান্ত স্থান কালো ঝুলের মতো দেখায়। আক্রাšপাতা ঝরে পড়ে। দমনের জন্য আক্রান্ত ডগা, পাতা ও ডাল দেখা মাত্র তা সংগ্রহ করে ধ্বংস করা। আক্রমণ বেশী হলে প্রতি লিটার পানিতে ম্যালাথিয়ন বা সুমিথিয়ন ২ মিঃ লিঃ, মারসাল ২০ ইসি ১ মিঃ লিঃ, ডায়মেয়েট ৪০ ইস ২ মিঃ লিঃ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

প্রশ্ন: বেগুনের লাল ক্ষুদ্র মাকড়  দমনের প্রতিকার কি?

রাজীব আহমেদ, কয়রা, খুলনা
উত্তর: এ পোকার মাকড় লাল রং এর অত্যন্ত ছোট, পাতার নিচে থাকে। সহজে দেখা যায় না। এরা পাতার রস চুষে খায়। পাতার খুব সুক্ষ্ম সাদা সাদা দাগ দেখা যায়। প্রতিকারের জন্য ক্ষেত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। প্রাথমিকভাবে আক্রা্ন্ত পাতা নষ্ট কর। আক্রমণ বেশী হলে মাড়কনাশক ব্যবহার করা যেমন থিওভিট, কুমুলাস বা ৮০% সালফার ২.৫ গ্রাম/ ১ লিঃ পানি।

প্রশ্ন: বেগুনের কাঁঠালে পোকা  দমনের প্রতিকার কি?

হোসেন আলি, সদর, জামালপুর
উত্তর: এ পোকার পূর্ণ বয়স্ক বিটল ও গ্রাব উভয়ই পাতা খায়। আক্রান্ত পাতা ঝাঁঝরা করে, পরে পাতা শুকিয়ে যায় এং ঝরে পড়ে। প্রতিকারের জন্য ক্ষেত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। গাছে ছাই ছিটানো। পরজীবি বোলতা সংরক্ষণ করা। ডিম ও কীড়া নষ্ট করা এবং পোকা সংগ্রহ করে মেরে ফেলা। শতকরা ১০ ভাগ পাতা পোকা দ্বারা আক্রাšহলে প্রতি লিটার। পানিতে ডেনিটল/ট্রিবন-১ মিঃ লিঃ বা সুমিথিয়ন- ২ মিঃ লিঃ বা সেভিন- ২ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে  করা।

কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবা

Exit mobile version