কৃষিসংবাদ

মুগ ও মাস কলাইয়ের রোগ এবং তাদের প্রতিকার

ড. কে, এম, খালেকুজ্জামান :
১। রোগের নাম ঃ হলুদ মোজাইক 

রোগের কারণ ঃ ইয়েলো মোজাইক ভাইরাস 

রোগের বিস্তার ঃ আর্দ্র আবহাওয়ায় বিকল্প পোষক হতে পোকা (সাদা মাছি)-এর মাধ্যমে এ রোগ সুস্থ গাছে বি¯তার লাভ করে।

রোগের লক্ষণ ঃ ১. গাছের বৃদ্ধির যে কোন পর্যায়ে এ রোগ হতে পারে।
২. পাতায় হলুদ ও গাঢ় সবুজ রঙের মোজাইকের মত দাগ পড়ে।
৩. দূর থেকে মাঠকে হলদে মনে হয়।
৪. আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে পাতা, ফুল ও ফল ছোট হয় এবং কুকড়ে যায়।
৫. ফলে ফলন অনেক কম হয়।

রোগের প্রতিকার ঃ

১. রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
২. রোগ সহনশীল জাত যেমন- বারিমুগ ৫ ও ৬ চাষ করতে হবে।
৩. প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৪. টিস্যু কালচার  এর মাধ্যমে ভাইরাস মুক্ত বীজ উৎপাদন করতে হবে।
৫. রোগের বাহক পোকা – সাদা মাছি দমনের জন্য
ক) প্রতি লিটার পানিতে ৫ মিলি নিম তেল ও ৫ মিলি ট্রিক্স মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ৩-৫ বার স্প্রে করতে হবে।
খ) অ্যাডমায়ার প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

২। রোগের নাম ঃ পাতায় দাগ 

রোগের কারণ ঃ সারকোস্পোরা ক্রুয়েন্টা  নামক ছত্রাক

রোগের বিস্তার ঃ

১. গাছের পরিত্যক্ত অংশ হতে রোগের জীবানু বায়ু, পানি প্রভৃতির মাধ্যমে এক জমি হতে অন্য জমি অথবা এক গাছ হতে অন্য গাছে ছড়ায়।
২. ৬০%-এর বেশী আর্দ্রতা ও ২৮ ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় এ রোগ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

রোগের লক্ষণ ঃ

১. প্রথমে পাতার উপর পানি ভেজা দাগ পড়ে।
২. পরবর্তীতে দাগটি ধূসর কেন্দ্র বিশিষ্ট হয় এবং কেন্দ্রের চারিদিকে খয়েরী বা লালচে বাদামী রং ধারণ করে।
৩. অনেকগুলো দাগ একত্রিত হয়ে পাতার উপর বড় আকারের দাগ সৃষ্টি হয়।
৪. পরে আক্রান্ত অংশের কোষ সমূহ শুকিয়ে যায় ও দাগের মাঝখানে ছিদ্র হয়ে যায়।
৫. আক্রমনের মাত্রা বেশী হলে সম্পূর্ণ পাতাই ঝলসে যায়।
৬. এই প্রকার দাগ ফলেও দেখা যায়।

রোগের প্রতিকার ঃ

১. রোগ প্রতিরোধী জাত যেমন- বারিমুগ ৫ ও ৬ চাষ করতে হবে।
২. রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
৩. ফসল সংগ্রহের পর আক্রান্ত গাছের অবশিষ্টাংশ এবং আর্বজনা পুড়ে ফেলতে হবে।
৪. ব্যভিষ্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ দিন দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।

৩। রোগের নাম ঃ পাউডারী মিলডিউ 

রোগের কারণ ঃ ইরাইসিফি পলিগণি নামক ছত্রাক

রোগের বিস্তার ঃ

১. সাধারনত গ্রীষ্মের শেষের দিকে এ রোগ হয়ে থাকে।
২. শুস্ক আবহাওয়া বা ৫০-৬০% বাতাসের আর্দ্রতায় এ রোগ দ্রুত বৃদ্ধি পায় ।

রোগের লক্ষণ ঃ

১. গাছের পাতার পৃষ্ঠীয়দেশে এ রোগের আক্রমন দেখা যায়।
২. পাতায় ছোট ছোট সাদা পাউডারের মত দাগ দেখা যায়।
৩. পরে সমস্ত পাতাই সাদা রঙের পাউডার দ্বারা ঢেকে ফেলে।
৪. রোগের প্রকোপ বেশী হলে সমস্ত গাছ (শাখা, কান্ড ও ফল) আক্রান্ত হয় এবং মারা যায়।

রোগের প্রতিকার ঃ

১. রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
২. ফসল সংগ্রহের পর অবশিষ্টাংশ এবং আর্বজনা পুড়ে ফেলতে হবে।
৩. পানি স্প্রে করলেও রোগের প্রকোপ কমে যায়।
৪. রোগ দেখা দিলে থিউভিট ৮০ ডব্লিউপি অথবা কুমুলাস ডিএফ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।

৪। রোগের নাম ঃ পাতা পচাঁ 

রোগের কারণ ঃ স্কেক্টিনিয়া স্কে¬রোশিওরাম নামক ছত্রাক

রোগের বিস্তার ঃ

১. আক্রান্ত গাছের উপর ছত্রাক ক্লেরোশিয়াম তৈরী করে।
২. ক্লেরোশিয়াম মাটির সাথে মিশে মাটিতে থেকে যায়।
৩. উপযুক্ত আবহাওয়ায় ইহা অংকুরিত হয়ে এসকোকার্প তৈরী করে।
৪. পরিপক্ক এসকোকার্প বিস্ফোরিত হয়ে এস্কোস্পোর নিক্ষেপ করে যা শস্যকে আক্রমন করে।

রোগের লক্ষণ ঃ

১. প্রথমে পাতার উপর পানি ভেজা দাগের সৃষ্টি হয়।
২. উষ্ণ ও মেঘলা আবহাওয়ায় দাগ সম্পূর্ণ পাতায় ছড়িয়ে পরে।
৩. পরে পাতা শুকিয়ে বাদামী রঙ ধারণ করে।
৪. ফল ও কান্ডেও আক্রমন করে।
৫. আক্রান্ত পাতা, ফল ও কান্ডে সাদা মাইসিলিয়াম এবং বিভিন্ন আকারের স্কে¬রোশিয়াম দেখা যায়।

রোগের প্রতিকার ঃ

১. ফসল সংগ্রহের পর গাছের অবশিষ্টাংশ ও আর্বজনা পুড়ে ফেলতে হবে।
২. শস্য পরিক্রমা অনুসরণ করতে হবে।
৩. জৈবিক দমনের ক্ষেত্রে ট্রাইকোডারমা বা রাইজোবিয়াম জীবানু সার দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে।
৪. প্রতি কেজি বীজের জন্য প্রোভেক্স-২০০ ডব্লিউপি ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
৫. রোগ দেখা মাত্র ছত্রাকনাশক ব্যভিষ্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।

৫। রোগের নাম ঃ ঢলে পড়া/গোড়া ও শিকড় পচাঁ/স্কে¬রোশিয়াম রট

রোগের কারণ ঃ ফিউজারিয়াম অক্সিসপোরাম , ফিউজারিয়াম ছোলানি এবং স্কে¬রোশিয়াম রফ্সাই নামক ছত্রাক

রোগের বিস্তার ঃ

১. ছত্রাক গুলো প্রধানত মাটি বাহিত এবং অন্যান্য শস্যকে আক্রমণ করে।
২. মাটিতে জৈব সার বেশী থাকলে।
৩. জমিতে ফসলের খড়কুটা থাকলে।
৪. সাধারণত মাটির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে (২৮ – ৩০ ডিগ্রী সেঃ) ও যথেষ্ট পরিমাণ আর্দ্রতা থাকলে এ রোগের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়।
৫. পানি সেচের মাধ্যমে আক্রান্ত ফসলের জমি হতে সুস্থ ফসলের মাঠে বিস্তার লাভ করে।

রোগের লক্ষণ ঃ
১. সাধারণত চারা গাছ এ রোগে আক্রান্ত হয়।
২. মাটি বরাবর ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং গোড়া সহ শিকড় পচেঁ যায়।
৩. গাছের অগ্রভাগের পাতা হলুদ হয়ে যায়, পরে সমস্ত গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
৪. হলুদ চারাগুলো শুকিয়ে মারা যায়। স্কে¬রোশিয়াম রফ্সাই দ্বারা দ্বারা আক্রান্ত গাছের গোড়ায় তুলার মত সাদা মাইসেলিয়া ও ছোট ছোট স্কে¬রোশিয়াম দেখা যায়।
৫. ফিউজারিয়াম-এর ক্ষেত্রে গাছের কান্ড লম্বালম্বিভাবে ফাটালে ভিতরের অংশ কালো দেখায়।

রোগের প্রতিকার ঃ

১. প্রতি কেজি বীজের জন্য প্রোভেক্স-২০০ ডচ ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
২. জৈবিক দমনের ক্ষেত্রে ট্রাইকোডারমা বা রাইজোবিয়াম জীবানু সার দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে।
৩. রোগাক্রান্ত গাছ তুলে এবং ফসল সংগ্রহের পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৪. আক্রান্ত জমিতে কয়েক বৎসরের জন্য শস্য পরিক্রমা অনুসরণ করতে হবে।
৫. ফসলের গোড়ার চতুর্দিকের মাটি নেড়ে শুষ্ক করে দিলে এ রোগ অনেকাংশে দমন হয়।
৬. ব্যভিষ্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে।

কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম

Exit mobile version