কৃষিসংবাদ

মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্যের গুণগতমান নিরুপনে সমস্যা ও করণীয়

ড. মোঃ জুলফিকার আলীঃ
fish-feed 2016

বিভিন্ন প্রাণীর মত মাছ ও চিংড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য খাদ্যের প্রয়োজন হয়। মাছ ও চিংড়ি জলজ প্রাণী জলাশয়ে উৎপাদিত প্রাকৃতিক খাদ্য যেমন প্ল্যাংকটন (ফাইটোপ্ল্যাংকটন বা ক্ষুদে উদ্ভিজ্ব শেওলা; জুপ্ল্যাংকটন বা ক্ষুদে জলজ পোকা/ কীট), বেনথোস ইত্যাদি খেয়ে মাছ ও চিংড়ি বেঁচে থাকে, বড় হয়। কিন্তু অল্প সময়ে অল্প জায়গা থেকে বেশী পরিমান মাছ বা চিংড়ি উৎপাদন করতে হলে মাছ ও চিংড়িকে প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি বাহির থেকে সম্পূরক খাদ্য দিতে হয়। এই সম্পূরক খাদ্য আবার মাছ ও চিংড়ির প্রজাতি ও বয়স/ আকার অনুযায়ী পুষ্টি চাহিদা মোতাবেক তৈরী করলে সেই খাদ্য হয় সূষম সম্পূরক খাদ্য। মাছের ও চিংড়ির বেশী উৎপাদন পেতে হলে বা বাণিজ্যিকভাবে মাছ ও চিংড়ি চাষ করতে সূষম সম্পূরক খাদ্যের ব্যবহার অপরিহার্য।

আমাদের দেশে মাছ ও চিংড়ি চাষীরা মাছের ও চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য হিসেবে সাধারনত চালের কৃঁড়া, গমের ভূসি (মিহি), সরিষার খৈল, তিলের খৈল ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে। এসব খাদ্য এককভাবে বা মিশ্রিত করে মাছকে খাওয়ানো হয় কিন্তু এসব খাদ্যে মাছ ও চিংড়ির সকল পুষ্টি চাহিদা মেটে না বলে মাছ ও চিংড়ির উৎপাদন কম হয়। এজন্য প্রাগ্রসর মাছ ও চিংড়ি চাষী বা খামারীগন মাছ ও চিংড়ি চাষে সুষম খাদ্য প্রয়োগে উৎসাহী হয়ে উঠে। এদিকে মাছ ও চিংড়ির চাষ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় বিগত পনর বছরের মধ্যে সারা দেশে বিশেষ করে ময়মনসিংহ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে মাছের খামার প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। পাংগাস, তেলাপিয়া, কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ, এবং কৈ মাছ চাষের খামার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোক্তা/ প্রাগ্রসর মাছ চাষীরা ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসার ফলে মৎস্য খাদ্যের চাহিদাও ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। আশার কথা এসময় মাছ চাষী/ খামারীদের মৎস্য খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য অনেক ব্যাক্তি উদ্যোক্তা মৎস্য ও চিংড়ির সুষম খাদ্যের বাণিজ্যিক উৎপাদনে এগিয়ে আসে এবং মৎস্য ও চিংড়ির খাদ্য কারখানা প্রতিষ্ঠা করে মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্য উৎপাদন, বিপনন ও বাজারজাত করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতিককালে মাছ চাষী/ খামারীদের কাছ থেকে অনেক বাণিজ্যিক মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্যের গুণগতমান নিয়ে প্রশ্ন উঠে। মাছ চাষী/ খামারীদের এবং মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মীদের কাছ থেকে অভিযোগ আসছে যে, অনেক বাজারে প্রাপ্ত বাণিজ্যিক মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্য খাওয়ানোর পরও মাছের স্বাভাবিক বৃন্ধি ও বেশী ফলন/ কাঙ্খিত উৎপাদন পাওয়া যাচ্ছে না।
বাজারে প্রাপ্ত মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্য উপাদান ও গুণগতমান
মাছ ও চিংড়ি খাদ্য তৈরীতে ব্যবহার করা যায় এমন অনেক সম্ভাবনাময় খাদ্য উপাদান দেশে সহজেই পাওয়া যায়। মাছের খাদ্য হিসেবে চালের কুঁড়া, গমের ভূষি, ভূট্টার আটা, সরিষা/ তিলের খৈল সচরাচর ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে দেশে ভাল মানের ফিশ মিল পাওয়া যায় না। বাজারে দ্বহানীয়ভাবে তৈরীকৃত ফিশ মিল, পাঁচ মিশালী শুটকী এবং চেওয়া মাছের শুটকীর গুঁড়া পাওয়া যায়, তা তেমন মানসম্মত নয়। বর্তমানে অনেকেই আমদানীকৃত প্রোটিন কনসেনট্রেট এবং মিট ও বোন মিল মাছের খাদ্যে প্রাণীজ আমিষের উৎস হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু বিভিন্ন দেশ হতে আমদানীকৃত মিট ও বোন মিলে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও বিশেষ করে ফাইবারের আধিক্য থাকায় মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্যে এদের ব্যবহার শতকরা ২০-২৫ ভাগের বেশী না করাই বাঞ্চনীয়। বেশি ব্যবহার করলে পুকুরের পানিতে শ্যাওলার উৎপাদন বেড়ে পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। খাদ্য তৈরির জন্য এমনসব খাদ্য উপাদান নির্বাচন করতে হবে যেগুলোর গুণগতমান ভাল, সহজে পাওয়া যায় এবং দামেও সস্তা। অবার নির্বাচিত খাদ্য উপাদানে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান আছে কিনা তাও বিবেচনায় আনতে হবে। চালের কুঁড়া তুষমুক্ত ও মানসম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় মাছের পরিপাক (ফরমবংঃরড়হ) ও পুষ্টি গ্রহণ (ধনংড়ৎঢ়ঃরড়হ) প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। দেশে বর্তমানে প্রাপ্ত মৎস্য খাদ্য উপকরণের মূল্য অত্যাধিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে দেশীয় এবং আমদানীকৃত মৎস্য খাদ্য উপাদানের মধ্যে অধিকাংশই নিুমান ও ভেজাল পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাজারে প্রাপ্ত কিছু কিছু খৈল এর মধ্যে ইদানিং কাঠের গুড়া, ছাই বা ভস্ম, পোড়া মাটির গুড়া, পোড়া মাবিল ইত্যাদির ভেজাল মিশ্রণ পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে প্রাপ্ত কিছু কিছু মিট এন্ড বোন মিলেও ভেজাল পরিলিক্ষিত হয়েছে। দেশে দুই ধরনের মিট এন্ড বোন মিল আমদানী হয়। একটা ফার্টিলাইজার গ্রেড অন্যটি ফিড/ খাদ্য গ্রেড। মাছ/ চিংড়ি বা পোল্ট্রিতে ফিড/ খাদ্য গ্রেডের মিট এন্ড বোন মিল ব্যবহার করার কথা। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেœে ফিড গ্রেডের মিট এন্ড বোন মিলের সাথে ফার্টিলাইজার গ্রেড মিশ্রিত করে ব্যবহার করে ভেজাল করা হচ্ছে। আবার মিট এন্ড বোন মিলের সাথে ইউরিয়া মিশিয়েও প্রোটিনের মাœা বাড়ানোর প্রবণতাও কিছু কিছু ক্ষেœে লক্ষ্য করা গেছে। এসব ভেজাল খাদ্য উপকরণ মাছ / চিংড়ির জন্য ক্ষতিকর এবং এসব খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করে খাদ্য তৈরী করলে মাছ/ চিংড়ির কাঙ্খিত উৎপাদন পাওয়া যায় না।

খাদ্য উপাদান বা খাদ্যের জৈব রাসায়নিক গঠন যেমন- আর্দ্রতা, ভস্ম, আমিষ, øেহ, আঁশ, ভিটামিন এবং খনিজ লবন বিশ্লেষনের মাধ্যমে পুষ্টিমান নির্ধারণ করা যায়। খাদ্য তৈরীর পূর্বে খাদ্য উপাদানগুলিতে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টিবিরোধী উপাদান আছে কিনা তাও বিবেচনায় আনতে হবে খাদ্য উপাদানের মানের ওপর প্রস্ততকৃত খাদ্যের মান নির্ভর করে। খাদ্য উপাদানের নিুলিখিত বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলো পরীক্ষা করে মানসম্মত খাদ্য উপাদান নির্বাচন করা যেতে পারে।
ক্স খাদ্য উপাদানসমুহ স্বাভাবিক রঙের
কি না তা নিরুপণ।
ক্স প্রতিটি খাদ্য উপাদানের গন্ধ মুল্যায়ন, যার মাধ্যমে ঐ উপাদান টাটকা কিনা তা বোঝা যায়। পঁচা র্দুগন্ধ বা পোড়া গন্ধ মারাতœক সমস্যা নির্দেশ করে।
ক্স খাদ্য উপাদান যদি ভেজা বা আঁঠালো থাকে তাহলে বুঝতে হবে খাদ্য উপাদান নিু গুণগত মানসম্পন্ন এবং এতে ছত্রাক জন্মাতে পারে।
ক্স পোকামাকড় কিংবা ছœাকের উপদ্বিহতি খাদ্য উপাদানের গুণগত মানের অবনতি নির্দেশ করে।
ক্স ময়লা এবং অন্যান্য অজৈবিক পদার্থের উপদ্বিহতি ভেজাল খাদ্যের প্রকৃতি নির্দেশ করে।
ক্স খাদ্যে আঁশের আধিক্য খাদ্যের পরিপাচ্যতা কমিয়ে দেয় এবং নিুমান নির্দেশ করে।
তাছাড়া জৈব রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে পুষ্টিমান নির্ণয় করে উপযুক্ত খাদ্য উপাদান নির্বাচন করতে হবে।

বাজারে প্রাপ্ত বাণিজ্যিক মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্য ও গুণগতমান
আধুনিক মৎস্য চাষ বিস্তার লাভের সাথে সাথে দেশে বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদিত মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্যের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১০০ টি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই পাংগাস, কার্প ও তেলাপিয়ার এবং কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান চিংড়ি, কৈ, মাগুর ও শিং মাছের খাদ্য উৎপাদন ও বিপনন করে আসছে। দেশে বর্তমানে বাণিজ্যিক মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্যের মোট উৎপাদনের ৭৭% পাাৈস, ১৪% তেলাপিয়া, ৫% চিংড়ি, ২% কার্প এবং ২% কৈ মাছের খাদ্য ঊৎপাদিত ও বাজারজাত হচ্ছে । প্রজাতিভিত্তিক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদিত ছয় প্রকার খাদ্য যেমনঃ রেনু পোনার জন্য নার্সারী খাদ্য (পাউডার জাতীয়); বিভিন্ন আকারের পোনার জন্য তিন ধরণের ষ্টার্টার ১-৩ (ক্র্যাম্বেল/ ফ্ল্যাক); বাড়ন্ত মাছের গ্রোয়ার (পিলেট/ দানাদার); বড় মাছ ধরার পূর্বে ফিনিশার (পিলেট/ দানাদার) বাজারজাত হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত গবেষনালন্ধ ফলাফলে দেখা গেছে যে, মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শতকরা ৬৮ ভাগ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত খাদ্যে প্রজাতি ভিšিক পুষ্টি চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিমান যথাযথ মাœায় পাওয়া যায় নাই। এর ফলে মাছ ও চিংড়ি চাষী/ খামারীরা কাঙ্খিত ফলন/ উৎপাদন পাচ্ছে না। কিছু কিছু খাদ্য উৎপাদন কারখানায় ব্যবহৃত খাদ্য উপকরণ, য¿এপাতি, রাসায়নিক দ্রব্যাদি, প্যাকিং উপাদান এবং জৈব নিরাপাšা ইত্যাদি ক্ষেœে উপযুক্তমান বজায় থাকে না। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান নিুমানের খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করে নিুমানের খাদ্য উৎপাদন ও বিপনন করছে। তাদের উৎপাদিত খাদ্যের প্যাকেটের মধ্যে উল্লেখিত পুষ্টিমান থেকে অনেক কম পুষ্টিমান পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পরিলিক্ষিত হয়েছে। এর ফলে চাষীরা চড়া মূল্যের এধরণের খাদ্য প্রয়োগ করেও কাঙ্খিত উৎপাদন না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।
অতীতে মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্য উৎপাদন, বিপনন বা বাজারজাতকরণের কোন আইন বা বিধিমালা না থাকায় মান নিয়¿এনহীনভাবে অনেক খাদ্য কারখানা মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্য উৎপাদন ও বিপনন করে এবং এতে অনেক চাষী/ খামারী নিুমানের খাদ্য প্রয়োগে ক্ষতিগ্রদ্বহ হয়। সরকার বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে “মৎস্য ও পশু খাদ্য আইন, ২০১০” প্রনয়ণ করেছেন। এই আইন অনুযায়ী সকল মৎস্য/চিংড়ি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় আনা যাবে। রেজিষ্ট্রেশন ব্যতিত কোন ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান যদি মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্য উৎপাদন ও বিপননের সাথে জড়িত থাকে তাহলে সেটা অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। কোন প্রতিষ্ঠান/ মৎস্য খাদ্য কারখানা উপযুক্ত গুণমান সম্পন্ন/ আদর্শমাœায় খাদ্য উৎপাদন ও বিপনন না করে আদর্শমাœার নীচে/ কম গুণমান সম্পন্ন খাদ্য উৎপাদন ও বিপনন করলে অথবা নিষিদ্ধ/ ক্ষতিকর উপাদান খাদ্যে ব্যবহার করলে ঐ প্রতিষ্ঠানের/ মৎস্য খাদ্য কারখানার রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করা যাবে। তাছাড়া কোন খাদ্যের আইনগত দিকসমুহ যেমনঃ প্যাকিং, লেবেলিং নিশ্চিত না করলে ঐসব খাদ্য উপাদান ও বিপননের রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করার ক্ষমতা কর্তৃপক্ষের নিকট সংরক্ষিত থাকবে। ইতোমধ্যে এ আইন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

উপসংহার
গুণগতমানসম্পন্ন মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্য উপকরণ উৎপাদন ও বিপনন এবং আদর্শমাত্রার পুষ্টিমান সম্পন্ন মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্য উৎপাদন ও বিপননের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই মৎস্য পশু খাদ্য আইন-২০১০ আন্তরিকতার সাথে মেনে মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্য উৎপাদন ও বিপননে সচেষ্ট হলে মৎস্য খাদ্যের গুণগতমানের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে। এছাড়া মৎস্য খাদ্যের গুণগতমান/ আদর্শমাত্রার খাদ্য ব্যবহারকারী ভোক্তা মাছ চাষী/ খামারীগনের সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে মৎস্য খাদ্যের ভেজাল রোধ এবং গুণগতমান বজায় রাখা সহজ হয়ে উঠবে। সর্বোপরি মৎস্য ও পশু খাদ্য আইনের বাস্তবায়নের মাধ্যমে অচিরেই মৎস্য ও চিংড়ি খাদ্যের ভেজাল রোধ এবং নিম্মমানের খাদ্য উৎপাদন ও বিপনন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

Exit mobile version