কৃষিসংবাদ

লেবু চাষে নতুন আশার সঞ্চার করেছেন নকলার মনিরুজ্জামান

মোঃ মোশারফ Lemon-farmerহোসেন,নকলা (শেরপুর)  :

লেবু চাষে নতুন আশা জেগেছে শেরপুরের নকলার চাষিদের মাঝে।  লেবু চাষ করে স্বাবলম্বি হচ্ছেন অনেক চাষি। তেমনি একজন হলেন নকলা উপজেলাধীন ভূরদী গ্রামের আলহাজ্ব ছাইয়েদুল হকের তৃতীয় পুত্র শেরপুর সরকারী কলেজের বিবিএস গ্রুপের শেষ বর্ষের ছাত্র এসএম মনিরুজ্জামান। তিনি মনস্থির করলেন শুধু পড়ালেখা করলেই চলবে না, পাশাপাশি কিছু একটা করা উচিত। প্রথমে তিনি পরীক্ষামূলক ভাবে বাড়ীর আঙ্গিনার পতিত জমিতে বিভিন্ন জাতের ৩০টি লেবু গাছ রোপন করেন।এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তী ২ বছরের মধ্যেই লেবু বাজারজাত করার উপযোগি হলে লাভবান হওয়ায় মনির আরও পতিত জমিতে লেবু ও অন্যান্য ফলজ বাগানের পরিকল্পনা হাতে নেন, ২৫শতাংশ জমিতে লেবু গাছ এবং ৩০ শতাংশ জমিতে ফলজ গাছ লাগান। ফলদ বাগান থেকে এখন পর্যন্ত লাভের মুখ না দেখলেও লেবুর বাগান থেকে প্রতি বছর লক্ষাধিক টাকার মুনাফা পাচ্ছেন। পতিত জমিতে লেবু সহ বিভিন্ন ফল চাষে মনিরের সফলতা দেখে উপজেলার অনেকেই তার পথ অনুসরণ করে লেবু ও ফলদ বাগান করা শুরু করেছেন। তার বড় দুই ভাই শেরপুর যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষন কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে লেবু ও অন্যান্য ফলজ বাগান করা শুরু করলেও তাদের চাকুরী হয়ে যাওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। ছোট ভাই মনির ভাবলেন বড় দুই ভাইয়ের ইচ্ছা পূরণ করবেন। এই সংকল্পকে সামনে রেখে বড় ভাইদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে তিনিও শেরপুর যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে প্রথমে মাছ চাষ ও গাভী পালন শুরু করেন, তাতে সুবিধা করতে না পেরে লেবু ও ফলজ বাগান করার সিদ্ধান্ত নেন।লেবু চাষ ও ফলদ বাগান করে ভাগ্য পরিবর্তনের বিষয়ে মনিরের সাথে কথা বললে তিনি বলেন- আগে আমাকে এ বিষয়ে অনেকেই নিরুৎসাহিত করলেও এখন এলাকার কৃষক মকুল, মালেক, আবেদ আলী, ছাত্র জব্দুল, বাবু, ফটিক, শাহিন, টুটুল, জাকির হোসেন বকুল, হেলাল, সাধু ও কাওছারের মত শতাধিক কৃষক ও ছাত্রসহ ফ্রেন্ডসীপ ক্লাবের ১৫ জন সদস্য লেবু ও ফলদ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এবং উত্তরোত্তর লেবু ও ফলজ বাগান বাড়ছে।

ভূরদী কৃষি পণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার ২৫ সদস্যদের সবার বাড়িতে লেবু গাছ লাগিয়েছেন এবং অন্যদের লাগাতে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা। চাষীরা বলছেন লেবু ও বিভিন্ন ফলজ চাষে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা ও সঠিক সময়ে পরামর্শ সহ উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে ভাল ফলন তথা আত্মনির্ভরশীল হতে পারব ইনশাল্লাহ্। তাই এলাকার কৃষকরা পতিত জমিকে কৃষি উৎপাদনে কাজে লাগানোর জন্য সরকারী সহযোগিতা কামনা করছেন। এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইসমাতুন মাসুমা জাহান পলাশী বলেন- মনিরের লেবু চাষ এলাকায় মডেলে পরিণত হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল বলেন, নকলায় এলাচি, কাগজি, বারি-১, বারি-২ বারি-৩, বারি বাতাবী-১, বারি বাতাবী-২ ও বারি বাতাবী-৪ জাতের লেবু বেশি চাষ করা হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন- বর্তমানে নকলায় ৫৫-৬৫ একর জমিতে লেবু চাষ হচ্ছে। ফলে পূর্বের ন্যায় অন্য এলাকা থেকে লেবু আমদানি করতে হয় না, বরং নকলার উৎপাদিত লেবু ঢাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, নকলায় লেবু চাষ বাড়াতে কৃষকদের পরামর্শ সেবা দেওয়া হচ্ছে। ফলে দিনদিন লেবু চাষির সংখ্যা বাড়ছে।

Exit mobile version