কৃষিসংবাদ

শরীয়তপুরে সবজি চাষে বাড়ছে ফেরোমন ও হলুদ ফাঁদের ব্যবহার

সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ বোর্ড

কৃষি সংবাদ ডেস্ক

হলুদ ফাঁদের ব্যবহারঃ নদী বিধৌত জেলা শরীয়তপুর। এ জেলার মানুষের অন্যতম পেশা কৃষি । জেলার উত্তর-দক্ষিন,পূর্ব- পশ্চিম এলাকা জুড়ে রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য নদী। ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ জেলা হওয়ার সত্যেও পদ্মা, মেঘনা,কির্তিনাশা  ও আড়িয়ালঁ খাঁ নদী দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও দূযোগপূর্ণ অবহেলিত এলাকা হিসেবে এ জেলাটি পরিচিত। চারদিকে নদী ও অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হওয়ায় প্রায় প্রতি বছরই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ আঘাত হানে এ অঞ্চলের মানুষের উপর। বন্যা খরা,ঘূর্ণিঝড় ও নদি ভাঙ্গনসহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেন এ অঞ্চলের মানুষের নিত্ত সঙ্গী। নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে প্রতি বছরই এ জেলার মানুষ সহায় সম্বল হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে।

বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের আঘাতে আঘাতে জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক,ক্ষুধা,দারিদ্রতা, অসহায়ত্বের বেড়াজালে আবদ্ধ কৃষি নির্ভর এ মানুষগুলোর ভাগ্যন্নোয়নে ১৯৯১ সাল থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা এসডিএস (শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি)।

ইফাদ এর অর্থায়নে এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর সহযোগীতায় Promoting Agricultural Commercialization and Enterprises (PACE) Project এর আওতায় নিরাপদ পদ্ধতিতে সাধারন ও উচ্চমূল্যের সবজি চাষের মাধ্যমে কৃষকের আয়বৃদ্ধিকরণ উপ-প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সাল থেকে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা, নড়িয়া এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলার ১২ হাজারের বেশি কৃষকদের নিয়ে নিরাপদ পদ্ধতিতে সাধারণ (ধুন্দল, চিচিঙ্গা, শসা, লাউ, বেগুণ,টমেটো ইত্যাদি) এবং উচ্চ মূল্যের স্কোয়াশ, ব্রোকলি, লেটুস, ক্যাপসিকাম সহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ, জৈব সার, জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার পদ্ধতি, ভার্মি কম্পোস্ট,অনুজীব সার তৈরিসহ কৃষকদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ, পরামর্শসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে সংস্থাটি।

একই ধারাবাহিকতায় এ বছরেও এসডিএস কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সহায়তায় শরীয়তপুরের পদ্মা নদী তীরবর্তী ও দুর্গম চরে সবজি চাষে কৃষি উদ্যোক্তারা কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যবহার করছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ বোর্ড। সেই সাথে রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরতা কমিয়ে বিভিন্ন জৈব সার ব্যবহারের প্রতি ঝুকছেন তারা। ফলে এ অঞ্চলে সবজি চাষে কমেছে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের খরচ। অন্যদিকে উৎপাদিত হচ্ছে নিরাপদ ও ভালো মানের সবজি। নিরাপদ পদ্ধতিতে সবজি চাষ লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় দিন দিন শরীয়তপুরের জাজিরা, নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই পদ্ধতি। তাদের উৎপাদিত নিরাপদ সবজি এখন স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা শহরে বিক্রি হচ্ছে।

নিরাপদ সবজি চাষী মোঃ নাঈম বলেন, এসডিএস এর ভাইদের পরামর্শে শসা ক্ষেতে ফেরোমন, হলুদ বোর্ড লাগানোর পর পোকা-মাকড়ের আক্রমণ অনেকটা কমে গেছে। ক্ষেতে তেমন পোকা-মাকড় নাই বললেই চলে। ফাঁদ লাগানোর পর কীটনাশক তেমন দিতে হয়নি ফলে খরচ আমার কিছুটা কমেছে। আমি মনে করি, এটা সবার ব্যবহার করা উচিত।

এসডিএস এর পরিচালক (এমএফ) বি এম কামরুল হাসান (বাদল) বলেন, শুরু থেকেই নিরাপদ ও উচ্চমূল্যের সবজি উৎপাদনে কৃষকের আগ্রহ সৃষ্টি করতে আমরা কাজ করছি। এ জন্য উপকরণ সরবরাহ, কারিগরি সহায়তা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান এবং মনিটরিং করছি। এ কাজে আমাদেরকে শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সহযোগিতা করছে। গঙ্গানগর, কাঁচিকাটা ও চরআত্রা এই তিনটি এলাকাতেই এ প্রকল্পের মাধ্যমে মাটি পরীক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ ও এ সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে কৃষকেরা পরিমিত মাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগে অভ্যস্ত হচ্ছেন। বিষমুক্ত ও কম খরচে সবজি উৎপাদনে শরীয়তপুরের তিনটি উপজেলার চরাঞ্চলে সবজি ক্ষেতে হলুদ ফাঁদ, ফেরোমন বসানো হয়েছে। ফলে পোকা দমনে কৃষককে কীটনাশক বা বিষ ব্যবহার করতে হয় না। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত সবজি ক্রেতার হাতে তুলে দেয়া।

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোঃ আব্দুস সাত্তার বলেন, আমরা নিরাপদ ফসল উৎপাদনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নিরাপদ সবজি ও ফল উৎপাদনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছি। এ কাজ আমরা সংস্থা ও ব্যক্তিপর্যায়ে আরো বেশি বেশি করার জন্য উৎসাহিত করছি। আমার জানা মতে, শরীয়তপুরের বেসরকারি সংস্থা এসডিএস দুর্গম চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায় অনেক আগে থেকেই জৈব কৃষি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তারা ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার, হলুদ ফাঁদ ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদসহ বিভিন্ন জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করছে।

Exit mobile version