কৃষিসংবাদ

উপকারী বৃক্ষ সর্পগন্ধা ঃযাতে রয়েছে নানা ভেষজ গুনের সমাহার

সর্পগন্ধা# বকুল হাসান খান #
সর্বগন্ধা। এক উপকারী বৃক্ষের নাম। এ গাছকে ইংরেজিতে রাউলফিয়া বলা হয়। খ্রিস্টের জন্মের কয়েক’শ বছর আগে চরক সংহিতায় সর্পগন্ধা নামে গাছটির উল্লেখ ছিল। সর্বগন্ধা আমাদের দেশের ছোট এক বুনো গাছ। বহু বছর ধরে হোমিওপ্যাথিক, অ্যালোপ্যাথিক এবং আয়ুর্বেদিক ওষুধের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে এ গাছ। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ উপমহাদেশের অন্যান্য দেশে মোট পাঁচ রকমের সর্বগন্ধা পাওয়া যায়। ‘রাউলফিয়া সার্পেন্টিনা’ বিজ্ঞান সম্মত এ নামের গাছটি ওষুধের জন্য লাগে। রাউলফিয়া শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ষোল শতকের জার্মান উদ্ভিদবিশারদ ও চিকিৎসাবিদ লিওনহার্ড রাউফলের শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ষোল শতকের জার্মান উদ্ভিদবিশারদ ও চিকিৎসাবিদ লিওনহার্ড লাউফলের নাম থেকে। সার্পেন্টিনা কথাটি এসেছে লাতিন শব্দ থেকে, যার অর্থ সাপ। আসলে, সাপকে নিয়ে এ গাছটির সঙ্গে আমাদের দেশে অনেক উপকথা ছড়িয়ে আছে। যেমন, সাপের সঙ্গে লড়ার আগে নেউল নাকি সর্বগন্ধার পাতা চিবিয়ে নেয়। সাপ মানে অবশ্যই বিষধর সাপ। এর জন্যই নাকি সাপের বিষ নেউলকে কাবু করতে পারে না। অনেকের বিশ্বাস ছিল, সর্বগন্ধা গাছের পাতা বেটে গোড়ালিতে লাগালে সাপ ও বোলতার বিষ ক্ষতি করতে পারে না। গাছটির শিকড় সাপের মতো অনেকটা আঁকাবাঁকা বলেই হয়তো এসব ধারনার জন্ম হয়েছে। এ উপমহাদেশের বেশিরভাগ দেশেই বুনো অবস্থায় সর্বগন্ধা গাছ জন্মায়। সর্পগন্ধা বৃক্ষ বড়জোর ৪ ফুট লম্বা, পাতাগুলো বেশ বড়। কদমগাছের পাতার মতো দেখতে অনেকটা। গোছা গোছা সাদা রঙের ফুল ফোটে গাছের মাথায়। ফুলের কুঁড়ি ও পাপড়ির নিচের দিক গোলাপি। সুইজারল্যান্ডের ‘সিবা’ কোম্পানির গবেষকরা এ গাছটি থেকে ‘রেসার পিন’ নামের এক ধরনের অ্যালকালয়েড কোষ্ঠীর রাসায়নিক যৌগ আলাদা করতে পেরেছিলেন। তার অনেক আগে অবশ্য দুজন ভারতীয় ওই একই গোষ্ঠীর অ্যাজমলিন নামের রাসায়নিক সংশ্লেষ করেছিলেন সর্পগন্ধা গাছ থেকে। রক্তচাপ কমানোর ওষুধ হিসেবে সারা বিশ্বে এখন রেসার পিন ব্যবহার করা হচ্ছে। উন্মাদদের মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য প্রথমে এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছিল। এখন অনিদ্রা রোগের ওষুধ হিসেবেও রেসার পিন প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। সর্পগন্ধার পাতার পাতার নির্যাস চোখের ছানি সারাতেও কাজে লাগে। তবে রেসার পিন সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় সর্পগন্ধা গাছের শিকড়ের ছালে। এ গাছ পাহাড়ি অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি জন্মায়। সর্পগন্ধা গাছে ফলও হয়ে থাকে। এ ফলগুলো প্রথমে সবুজ, তারপর লাল এবং সবশেষে কালো হয়ে যায়। এক সঙ্গে প্রচুর ফুল ও তিন রঙের ফলসহ দেখতেও সর্পগন্ধা গাছটি বেশ সুন্দর লাগে।

কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম

Exit mobile version