কৃষিসংবাদ

অধিক ফসল উৎপাদনে মাটির স্বাস্থ্য ও ফসল ব্যবস্থাপনা

কৃষিবিদ এম এ মজিদ

Soil Management
মাটির স্বাস্থ্য ঠিক রেখে একই জমি থেকে অধিক ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে নিয়মিত মাটি পরীক্ষা করানো উচিত। এ জন্য সঠিক নিয়মে সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে থেকে মাটি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে হবে। যে জমির মাটি পরীক্ষা করতে হবে, উহার চার পার্শ্বের আইলের ভিতর দিকে ৪-৫ হাত বাদ দিয়ে ১০-১২ টি (জমির আয়তন অনুসারে কম বেশী হতে পরে) স্থান থেকে মাটি সংগ্রহ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জমির কর্ষন স্তর থেকে কোদাল/বেলচা দিয়ে ভি(া)আকৃতির গর্তের এ পার্শ্বে থেকে চার আঙ্গুল পরিমান (৭-৮ সে. মি.)পুরু মাটির চাকা পলিথিনে নিয়ে সব নমুনা একত্র করে আগাছা মুক্ত করতে হবে। সংগ্রত মাটি গুলি একটি শীটে রেখে সমান চার ভাগে ভাগ করে দুই ভাগ ফেলে দিতে হবে, আর বাকি দুই ভাগ আবার একত্রে করে একই নিয়মে চার ভাগ করে দুই ভাগ নিতে হবে। এ ভাগে প্রায় আধা কেজি মাটি নিয়ে ভেজা থাকলে ছায়াযুক্ত স্থানে শুকিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে। চুড়ান্ত ভাবে সংগ্রহিত মাটি সারা দেশ ব্যাপি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপজেলা পর্যায়ের মৃত্তিকা পরীক্ষাগারে অথবা এস আর ডি আই এর ভ্রাম্যমান বা স্থায়ী পরীক্ষাগার গুলিতে মাটি পরীক্ষা করে সে অনুসারে সুষম সার ব্যবহার করলে জমি থেকে অধিক ফসল পাওয়া যেতে পারে।
অম্ল ও ক্ষার মাটি :
মাটির অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব মাপার জন্য পি এইচ মিটারে শূন্য (০) থেকে ১৪ মাএায় পরিমাপ করা হয়। পি এইচ ৭ হলে মাটি নিরপেক্ষ এবং ইহার কাছাকাছি হলে ভাল। ভালভাবে কৃষি কাজ করা যায় ৪-১৪ পি এইচ মাটিতে। শূন থেকে ৭ পি এইচ হলে মাটি এসিডিয় এবং ৭-১৪ পি এইচ হলে মাটি ক্ষারীয়। পি এইচ খুব কম বা বেশি হলে ফসলের মাটি থেকে পুষ্ট্ িউপাদান গ্রহন করতে অসুবিধা হয় এবং কোন কোন ক্ষেএে মাটিতে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়; ফলে ফসল ভাল হয় না। অম্লীয় মাটিতে এ্যলুমিনিয়াম ও ম্যাংগানিজ খুব দ্রবণীয় এবং মাটি খুব বিষাক্ত হতে পারে। এ গুলো গাছের ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং মলিবডেনাম গ্রহন ক্ষমতা কমে দেয়। বিশেষ করে অম্লীয় মাটিতে ফসফরাসের প্রাপ্যতা কমিেেয় যায়। যদি মাটিতে বোরন, তামা ও দস্তার ঘাটতি থাকে সেগুলো কম পি এইচ-এ বিষাক্ত হতে পারে। মধ্যম ক্ষারীয় মাটিতে বোরন, তামা এবং দস্তার ঘাটতি হয় এবং পুনরায় ফসফরাসের প্রাপ্যতা কমিয়ে দেয়। অম্লত্ব কম বা বেশি উভয় ক্ষেএেই ফসফরাসের সহজলভ্যতা কমিয়ে দেয়।
মাটিতে চুন ব্যবহারের উপকারিতা ঃ
(১) চুন মাটিতে অম্লীয়ভাব দুর করে নিরপেক্ষ করে। (২) উপকারি অণুজীবের সংখা বৃদ্বি করে। (৩) চুন গাছের নিকট ফসফরাসের সহজলভ্যতা সৃষ্টি করে। (৪) মাটিতে পটাস ও মলিবডেনাম উপস্থিতি নিশ্চিত করে। (৫) প্রয়োগকৃত চুন ডলোমাইড হলে গাছের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সরবরাহ করে। (৬) চুন এ্যালুমিনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও আয়রনের বিষাক্ততা কমায়।
মাটির নমুনা পরীক্ষা করে সঠিক পি এইচ জেনে নিয়ে; সুষম সার ব্যবহার করলে ফসলের উৎপাদন বেড়ে যায় এবং কৃষকের বেশী আয় হবে ও দেশ খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে।

Exit mobile version