আউশ ধানে লাভ বেশি : গেল বছরের চেয়ে এবছর দ্বিগুণ অর্জন

আউশ ধানে লাভ বেশি

আউশ ধানে লাভ বেশি
মো. মোশারফ হোসেন, শেরপুর প্রতিনিধি :

শেরপুরের নকলায় যেদিকে দৃষ্টি যায়, শুধু সবুজের সমারোহ নজরে পড়ে। উপজেলার দিগন্ত জুড়ে শুধু আউশ ধানের মাঠ। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আউশ ধান রোপন করা হয়েছে, যা গেল বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন বেশি এবং গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ আউশ ধানের আবাদ হওয়ার পিছনে উল্লেখযোগ্য কারন- উপজেলা কৃষি অফিসের একান্ত প্রচেষ্ঠা এবং গত বছরের বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে যে ক্ষতি হয়েছিল তা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরাধীন নকলা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২০ হেক্টর জমি এবং উৎপাদিত ধান থেকে ৫৫৭ মেট্রিকটন চাল পাওয়ার সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চাষে অর্জন ৭৫ হেক্টর বেড়ে হয়েছে ২৯৫ হেক্টর। আর গেল বছর লক্ষ্য মাত্রা ও অর্জন ছিল ১৬০ হেক্টর জমি। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে উৎপাদন অনেক বাড়বে বলে ধারনা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

এবছর ব্রিধান-৪৮, বিনাধান-১৯, বিআর-২৬, নেরিকা মিউট্যান্ট জাতের ধান বেশি চাষ করা হলেও নতুন উদ্ভাবিত ব্রিধান-৮২ জাত ১৫ একর জমিতে ড্রাম সিডারের মাধ্যমে চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলার ৫৪০ কৃষককে এক বিঘা করে ৫৪০ বিঘা জমিতে আউশ ধান রোপনের জন্য প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে।

তাছাড়া উপজেলায় ৭২ টি প্রদর্শনী প্লটেও আউশ আবদ করা হয়েছে; তারমধ্যে চাষী পর্যায়ে বীজ উৎপাদনের জন্য এক একর করে ১৫টি, ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম (এনএটিপি-২) প্রকল্পের আওতায় ৫০ শতাংশ করে ১৬টি, পুষ্টি প্রকল্পের আওতায় এক বিঘা করে ৩টি, রাজস্ব খাতের আওতায় ৫০ শতাংশ করে ২০টি, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিনা)’র উদ্ভাবিত বিনাধান-১৯ এক বিঘা করে ১৫টি এবং ড্রাম সিডারের মাধ্যমে জালালপুর, ধুকুড়িয়া ও টালকী এলাকায় তিনটি প্রদর্শনী প্লটে আরও ১৫ একর জমিতে আউশ ধান রোপন করা হয়েছে।

চলতি মৌসুমে আউশ ধানের বাম্পার ফলন হবে এবং কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন বলে আশা করছেন কৃষকসহ কৃষি কর্মকর্তারা। ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা কৃষক ছাইয়েদুল হক, সাধারণ সম্পাদক কৃষক হেলাল, সদস্য কৃষক ঈসমাইল ও বেলাল; ছোট মোজার এলাকার কৃষক নজরুল, বড় মোজারের আজিজুল ও পোলাদেশীর সুরুজ মিয়াসহ অনেক কৃষক জানান, আউশ আবাদে অপেক্ষাকৃত কম খরচে লাভ বেশি পাওয়া যায়। তাই আগামীতে চাষ উপযোগী সব পতিত জমিতেই আউশ ধান রোপন করবেন বলে তারা জানিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গত বোরো আবাদে বন্যায় নকলার কৃষকদের খুববেশি ক্ষতি নাহলেও, অতিবৃষ্টি ও শীলা বৃষ্টিতে বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তারা। তাই কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে অনেক পতিত জমিতেও আউশ ধান রোপন করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে অর্জন বেড়ে গিয়ে, গেল বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ আউশ আবাদ হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর জানান, আউশ ধান রোপন উপযোগী সব জমিকে চাষের আওতায় আনতে এবং কৃষিপণ্য উৎপাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আউশ আবাদ বাড়াতে কৃষকদের পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও প্রনোদনা দেওয়া হচ্ছে। এবছর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন বেশি এবং গেল বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ আবাদই এর সুষ্পষ্ট প্রমাণ বহন করে বলে তিনি দাবী করেন।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিনা) উপকেন্দ্র (নালিতাবাড়ী) শেরপুরের উর্ধŸতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসরীন আখতার জানান, চলতি মৌসুমে বিনা’র উদ্ভাবিত বিনাধান-১৯ এর রোপনকৃত ক্ষেতের বর্তমান অবস্থা ভালো দেখে চাষিরা খুব খুশি। ফলনও ভালো হবে বলে তারা আশা করছেন। তাই আউশ মৌসুমে বিনাধান-১৯ সহ বিনা’র উদ্ভাবিত বিভিন্ন ধান চাষে কৃষকরা ঝুঁকছেন বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *