স্বপ্নের ১৮ দিনঃ পবিপ্রবির কৃষি অনুষদের ১৫তম ব্যাচের ভারত ভ্রমনের গল্প

ভারত ভ্রমনের গল্প
ভারত ভ্রমনের গল্প

নাজমুল হাসান অন্তর

সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আকাঙ্ক্ষা কবে ভারত সফরে যাবো। আমরা আগেই জানতাম কৃষি অনুষদে পড়লে একটা সার্ক কান্ট্রি ট্যুর পাবো। সেই মাহেন্দ্রক্ষন আসে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের ট্যুর পাশ হয়। সবাই এর আগেই পাসপোর্ট ভিসা তৈরি করে রেখেছিলাম। ট্যুর প্লান সাজানো হলো। সবাই নিজের মত সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়েছে।

রাত ০৯ টায় বিশ্ববিদ্যালয় বাসে করে আমাদের বরিশাল দিয়ে আসা হলো। বরিশাল থেকে বেনাপোলের বাস রাত ১২ টায়। সবাই বাসে করে সকাল সকাল বেনাপোল নামলাম। ফ্রেশ হয়েই উদ্দেশ্য ইমিগ্রেশন পাস হওয়া। সকলের ইমিগ্রেশন পার হতে প্রায় দুপুর ১২ টা বেজে গেছিলো। আমরা দুই গ্রুপে প্রায় ১১০ জন ছিলাম। যার জন্য সময়টা একটু বেশি লেগেছিলো। এর মধ্যেই আমরা আমাদের টাকা গুলো রুপি করে নিয়েছিলাম। হরিদাশপুর থেকে সাড়ে ১২ টার দিকে কলকাতার উদ্দেশ্যে বাস ছাড়লো। আঁকা বাঁকা রাস্তায় বাস ছুটছে ঝড়ো গতিতে। শতবর্ষী গাছ গুলো দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার দুপাশে। কেউ ঘুমোচ্ছে আবার কেউ গান গাচ্ছে আবার কেউ হয়তো তার প্রিয়জনকে নিয়ে এই শত বছরের পুরানো রাস্তায় হাটার স্বপ্ন দেখতেছে। যাই হোক বিকাল ৫টার দিকে বাস এসে কলকাতা থামলো। আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করে হোটেল ম্যানেজ করে হোটেলে উঠি। হোটেলটা ভালোই বড়, একসাথে আমরা অনেক থাকায় এই হোটেল ছাড়া আর কোনো হোটেলে সিট পাইনি। রাতে পরের দিনের প্লান করে সবাই ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে আমাদের একটা গ্রুপ আলাদা হয়ে আগ্রার উদ্দেশ্যে চলে যায়। আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠেই কলকাতার আসে পাশ ঘুরে দেখার জন্য বের হই। সায়েন্স সিটি, ভিক্টোরিয়া, ইডেন গার্ডেনস ভাগ ভাগ হয়ে ঘুরে রাতে যাই হাওড়া ব্রিজে। রাতের দৃশ্য যেন নিজের অজান্তেই মন কেড়ে নিয়েছিলো। আরো অনেক ঘুরার জায়গা ছিলো কিন্তু পরের দিন সকালেই আমাদের ট্রেনের টিকিট কাটা ছিলো আগ্রার উদ্দেশ্যে।  রাতে হোটেলে ঘুমিয়ে সকাল সকাল বের হই হাওড়া স্টেশনে যাওয়ার জন্য। হাওড়া থেকে সকাল ৯:৪৫ এ আমাদের ট্রেন। যথা সময় ট্রেন ছাড়লো। ট্রেনে আমরা ভুলেই গেছিলাম যে আমরা বিদেশের মাটিতে আছি। সবাই আড্ডা গানে ভেসে গেছিলাম। জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছিলো বিদেশের মাটিতে কৃষিকাজ, ফসল ফলাদি। মনে হয় না এ অন্য দেশ। মাঝে মধ্যে কেউ আবার গভীর ঘুমে মগ্ন। এভাবেই কেটে যাচ্ছে সময়।

এর মধ্যেই দুপুর, রাতের খাবার আমরা ট্রেনেই সারি। ট্রেনের খাবারের দামটা একটু বেশি হলেও খাবার ভালোই ছিলো। সকাল হয় তখন হয়তো ট্রেন অন্য প্রদেশে। জানালা দিয়ে তাকিয়েই সেই চিরচেনা ইন্ডিয়ানদের হাজার বছরের ঐতিহ্য চোখে পড়ে। যা নিয়ে ইন্ডিয়াতে সিনেমাও হয়ে গিয়েছে। ট্রেন বিকাল ৪ টার পর আগ্রা এসে পৌঁছালো। সবার মনে আলাদা উত্তেজনা কাজ করছে। সে যেন এক প্রেমের নগরীতে সবার পদধুলি। হোটেলে গিয়ে সবাই ক্লান্তি নিয়ে ঘুম। আমরা কয়েকজন আর আমাদের গাইড স্যার গিয়ে সকালে ঘুরতে বের হওয়ার জন্য সিএনজি ঠিক করে আসলাম। সকাল সকাল উঠেই আমাদের আগ্রা ঘুরার মিশন শুরু।

(ধারাবাহিক ভাবে চলবে)

লেখকঃ এম এস ছাত্র, কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *