শেরপুরের নকলায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে পার্চিং উৎসব অনুষ্ঠিত

পার্চিং উৎসব

পার্চিং উৎসব

মো. মোশারফ হোসেন, শেরপুর প্রতিনিধি:

শেরপুরের নকলা উপজেলায় বিষমুক্ত শাক-সবজি ও শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পার্চিং ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদের নিয়ে পার্চিং উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের আয়োজনে ৫ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে উপজেলার ঢাকা-নাকুগাঁ মহাসড়কের গড়েরগাঁও মোড় এলাকায় এ উৎসব পালন উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

ওই পার্চিং উৎসবে ভূরদী খন্দকার পাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থা, অগ্নিবীনা ক্ষুদ্র কৃষক আইপিএম ক্লাব, তেঘরি সিআইজি কৃষি সমবায় সমিতিসহ বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের সদস্য ও বিপুল সংখ্যক কৃষক-কৃষাণি অংশগ্রহণ করেন।

ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ আসাদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে খামার বাড়ী শেরপুরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আশরাফ উদ্দিন, উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পদাক মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, নকলা পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফেরদৌস রহমান জুয়েল, উপজেলা কৃষকলীগের আহবায়ক আলমগীর আজাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা তাদের বক্তব্যে জানান, পার্চিং প্রযুক্তি বেশ স্থায়ী হওয়ায় এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৃত পার্চিং হিসেবে বাঁশের কঞ্চি বা গাছের ডালপালা ব্যবহার করা হয়, আর বাংলাদেশে জীবন্ত পার্চিং হিসেবে আফ্রিকান ধৈঞ্চা গাছ ব্যবহার করা হয়। ধৈঞ্চা গাছে পাখি দুল খেতে পছন্দ করে। তাই এই ধৈঞ্চা গাছ অধিক কার্যকরী। অন্যদিকে ধৈঞ্চা গাছের নডিউল, পাতা এবং পাখির বিষ্টা জমিতে জৈব সারের চাহিদা পূরণ করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। ফসলের উচ্চতা থেকে কমপক্ষে এক ফুট উচ্চতায় এক মাস বয়সী ধৈঞ্চা গাছ মূল জমিতে রোপন করা উত্তম, তাতে করে পাখি সহজেই বসতে পারে। সাধারনত প্রতি পাঁচ শতাংশ জমির জন্য একটি ধৈঞ্চা গাছ লাগাতে হয়। সে হিসাবে একরে ১৮ থেকে ২০ টি পার্চিং ব্যবহার উত্তম। ওইসব পার্চিংয়ে বসে পাখিগুলো মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি পোকা, স্কিপার পোকার মথ, লার্ভা বা কীড়ার মধ্যে শিষকাটা লেদা পোকা, সবুজ শুড় লেদা পোকার কীড়া; খাটো শুড় ঘাস ফড়িং, লম্বা শুড় ঘাস ফড়িং, উড়চুঙ্গা খেয়ে ফেলে। তবে কিছু কিছু পাখি লেডি বার্ড বিটল ও ক্যারাবিড বিটলের মতো অনেক উপকারী পোকাও খেয়ে থাকে। এক তথ্যমতে, একটি ফিঙে সারা দিনে অন্তত ৩০টি করে পোকা, মথ, ডিম, কীড়া ও পুত্তলী খেয়ে থাকে। তাই কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে পার্চিংয়ের কোন বিকল্প নেই। আর তাইতো কৃষি বিভাগ এই প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে বাড়াতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। নির্মল পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের দিকে লক্ষ্য রেখে সবুজ কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়াতে কৃষকদের উৎসাহিত করছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।

ভূরদী খন্দকার পাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার নব নির্বাচিত সভাপতি আলহাজ্ব মো. ছাইদুল হক ও সাধারন সম্পাদক হেলাল উদ্দিন জানান, ফসলের ক্ষেতে সবুজ কৃষি প্রযুক্তির অংশ হিসেবে পার্চিং ব্যবহারে তারা বেশ উপকৃত হচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ ও উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানান, সবুজ কৃষি প্রযুক্তির অংশ হিসেবে পার্চিংয়ের কোন বিকল্প নেই। অল্প ব্যয় ও শ্রমে বিষমুক্ত শাক-সবজি, শস্য, ফুল-ফল উৎপাদনে পার্চিং একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি প্রযুক্তি। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর বলেন, এই প্রযুক্তিটি মাঠ ফসলে ধীর গতিতে কাজ করলেও এটি পরিবেশ বান্ধব, অধিক কার্যকরী ও স্থায়ীত্বশীল। তাই আর্থিক ক্ষতি কমিয়ে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে নকলার কৃষকরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। সুফল দেখে খুব দ্রুত এই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। তিনি আরো বলেন, পার্চিং প্রযুক্তি সারাদেশ ব্যাপী সব ফসলের মাঠে ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে দেশের মোট শস্য ও ফসলের উৎপাদান কয়েক হাজার মেট্রিকটন বেড়ে যাবে। এতে পরিবেশ থাকবে সুন্দর, কৃষক হবেন লাভবান, ভোক্তারা পাবেন বিষমুক্ত শাক-সবজি, শস্য ও ফুল-ফল।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *