কৃষিবিদ এ.কে.এম. আনিছুর রহমান,
কোয়েল পোল্ট্রি জগতের ক্ষুদ্রতম সদস্য। জাপানী বিজ্ঞানীরা সর্বপ্রথম কোয়েল পাখীকে গৃহে পালনের কলাকৌশল উদ্ভাবন করেন। কোয়েলের আদি জন্মস্থান জাপানে হলেও পুষ্টিগত কারণে এটি সারা বিশ্বে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কোয়েলের জনপ্রিয় জাত হল জাপানিজ কোয়েল যার বৈজ্ঞানিক নাম কটরনিক্স জাপোনিকা । বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কোয়েল পালন কখন থেকে শুরু হয়েছে সে বিষয়ে কোন তথ্য না থাকলেও কোয়েল পাখির ডিম ও মাংসে অন্য যে কোন পোল্ট্রি থেকে বেশী পুষ্টি এবং কোলেস্টেরল কম থাকায় সকল বয়সী মানুষের নিকট ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া কোয়েল চাষের অত্যন্ত অনুকূল বিধায় বানিজ্যিক ভিত্তিতে কোয়েল খামার গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। কোয়েল পালনে বিভিন্ন ধরনের উপকারীতা রয়েছে- (ক) কোয়েলের মাংস ও ডিম খুবই সুস্বাদু। এদের মাংস ও ডিমে পর্যাপ্ত পরিমান প্রোটিন বিদ্যমান। বিশেষ করে কোয়েলের একটি ক্ষুদ্র ডিমে যে পরিমান প্রোটিন রয়েছে বড় আকারের মুরগীর একটি ডিমে সেই পরিমান প্রোটিন রয়েছে। অথচ দামের দিক থেকে একটি মুরগীর ডিমের বিনিময়ে চারটি কোয়েলের ডিম পাওয়া যায়। (খ) কোয়েলের ডিমে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এনজাইম এবং এমাইনো এসিড এমনভাবে বিন্যস্ত যে, এর ডিম খেলে শরীরের সব ধরণের পুষ্টির অভাব পূরণ করে শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। (গ) কোয়েলের ডিম ও মাংসে চর্বির পরিমান খুব কম বলে যেকোন বয়সী মানুষের জন্য নিরাপদ। (ঘ) পুষ্টিমানের দিক বিবেচনা করে কোয়েলের ডিমকে পুষ্টির বোমা বলা হয়ে থাকে। শিশুদের পুষ্টির চাহিদা পূরণে কোয়েলের ডিমের ব্যাপক ভুমিকা রয়েছে। ডিম ছোট বিধায় শিশুরা আনন্দের সাথে খেতে পারে (ঙ) কোয়েল ২৫-৩০ দিন বয়সেই খাবার উপযোগী হয় এবং ৪২ দিন বয়সেই ডিম পাড়া শুরু করে। (চ) একটি ভালো জাতের কোয়েল বছরে ২৫০-৩০০টি ডিম পাড়ে এবং এটি দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় বানিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। (ছ) একটি মুরগী পালনের জায়গায় ১২ টি কোয়েল পালন করা যায় বলে এটি পালনে কম জায়গার প্রয়োজন হয়। কম পূজি বিনিয়োগ করে বড় আকারের খামার প্রতিষ্ঠা করা যায়। (জ) কোয়েলের রোগবালাই নেই বলে এন্টিবায়োটিক, ভেকসিন ও অন্যান্য ঔষধ ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না যা খামারের উৎপাদন খরচ কমায় এবং জনস্বাস্থের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। (ঝ) একজন ছোট খামারী ৫০০০টি একদিনের বাচ্ছা পালন করে খুব সহজেই মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় করতে পারেন।
কোয়েল পালনে খুব কম জায়গা লাগে। প্রতি বর্গফুট জায়গায় ৬-৭ টি কোয়েল পালন করা যায়। ফলে একজন ক্ষুদ্র খামারী খুব সহজেই কোয়েল খামার শুরু করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ভাল হ্যাচারী থেকে একদিনের বাচ্চা সংগ্রহ করে মুরগীর বাচ্চার ন্যয় ৭-১০ দিন ব্রুডিং করতে হবে। বাচ্চাকে দু-একদিন গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি খাওয়াতে হয়। প্রথম সপ্তাহে খবরের কাগজ বিছিয়ে তার উপর খাবার ছিটিয়ে দিতে হবে এবং প্রতি দিন খবরের কাগজ পরিবর্তন করতে হবে। এক সপ্তাহ পর ছোট খাবার পাত্র ব্যবহার করতে হবে। পানির পাত্রে বাচ্চা পড়ে গিয়ে যাতে ভিজে না যায় সেজন্য পাত্রে মার্বেল বা পাথর খন্ড রাখতে হবে। সুসম পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করলে ২৫-৩০ দিনেই এর মাংস বিক্রি বা খাওয়ার উপযোগী হয়। পাখীকে ডিম পাড়াতে হলে সুস্থ-সবল স্ত্রী কোয়েল আলাদা করে লেয়ার মুরগীর খাবার সরবরাহ করতে হবে। পুরুষ পাখী মাংসের জন্য বিক্রি করে দিতে হবে। কোয়েল পাখীর মৃত্যুহার খুব কম এবং খাবার খরচ কম বিধায় একজন খামারীর শতভাগ লাভের নিশ্চয়তা রয়েছে যা অন্য কোন পোল্ট্রির ক্ষেত্রে নেই।
কোয়েল পাখী পালন গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন এবং বেকার যুবকদের অত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে গ্রামের মহিলারা তাদের দৈনন্দিন কাজের বাইরে অনায়সে ছোট পরিসরে এক-দুই হাজার কোয়েল পালন করতে পারে। এতে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের প্রাণীজ আমিষের প্রয়োজন মেটাতে ভুমিকা রাখবে। এ লক্ষে বেকার যুবকদের গবাদি পশু, হাঁস-মুরগী পালনের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর তাদেরকে কোয়েল পালনের প্রশিক্ষণ দিয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সর্বোপরি দেশের বিশাল জনগোষ্ঠির খাদ্যের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীল স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য সমন্বিত ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের দিকে আমাদেরকে মনোযোগী হতে হবে।
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম