সম্ভাবনাময় বিরল ফল এ্যাভোকাডো চাষ হচ্ছে এখন নকলায়

বিরল ফল এ্যাভোকাডো

মোঃ মোশারফবিরল ফল এ্যাভোকাডো হোসেন, নকলা (শেরপুর) :

বিরল ফল এ্যাভোকাডো : বিজ্ঞানের ভাষায় পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের আবির্ভাব হয় পানিতে, আর স্থলের আদিবাসিন্দা উদ্ভিদকুল। কাজেই জলজ প্রাণি এবং উদ্ভিদ জগত আমাদের নমস্য পূর্বপুরুষ। পূর্বপুরুষ হিসেবে তাদের প্রতি আমাদের যথেষ্ঠ সমিহ রয়েছে। আবার তারাও কিন্তু অক্সিজেন সহ অনেক কিছুই বিলিয়ে দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। অথচ আজও সব উদ্ভিদ চিনা জানা শেষ হয়নি। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্ভিদের সন্ধান দিচ্ছেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা, আবিষ্কার করছেন নতুন নতুন জাতের। তার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশ হতে আমাদের দেশে আনা হচ্ছে নতুন নতুন জাতের ফুল ফল। এমন একটি বিরল ফলের নাম এ্যাভোকাডো।  যার বৈজ্ঞানিক নাম Persea americana এর উৎপত্তিস্থল ভূমধ্য সাগরিয় অঞ্চলে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলাসহ বেশ কয়েকটি জেলার মধ্যে শুধুমাত্র শেরপুর জেলার নকলাতেই একটি এ্যাভোকাডো গাছ রয়েছে। নকলা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ সীমা সংলগ্ন ওই বিরল প্রজাতির দুই ডাল বিশিষ্ট গাছটি চার বছর যাবৎ ফল দিচ্ছে।

এই ফলটি বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। জনশ্রুতি রয়েছে এই ফলটি পাকলে ভিতরে মাখনের মতো হয় বলেই ভারতীয়রা নাকি মাক্কন ফল বলে চিনে। তবে অনেক দেশ ভিন্ন ভিন্ন নামেই চিনে।

তথ্য মতে এই ফলের গাছ বীজ হতে গজায়। ১৮৩৩ সালে ফ্লুরিডাতে ও ১৮৫৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়াতে সর্ব প্রথম এই ফলের সন্ধান পাওয়া যায়। তারপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ভঙ্গুর ও দুর্বল প্রকৃতির কান্ড বিশিষ্ট এই গাছের ফল কাঁচা অবস্থায় ভিতর ও বাহিরের রং সবুজ থাকে; তবে পাকলে ভিতরের মাংসল অংশটা হালকা হলুদ রং ধারন করে। কাঁচা অবস্থায় তেঁতু স্বাদ যুক্ত থাকে, কিন্তু পাকলে সু-মিষ্ট হয়। ফুলের রং সাদাটে ও আকৃতি জলপাই ফুলের মতো হলেও জলপাই ফুলের মতো ছোট নয়, বেশ বড় হয়। বীজ বপণের ৭ থেকে ৮ বছর পরে ফুল ফল হয়। ফল অসার পর তা পাকতে সময় লাগে ৫ মাস। ৮ থেকে ১০ টি ফলে এক কে.জি ওজন হয়। যার বাজার মূল্য প্রতি কে.জি ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা। একটি গাছে ১২০কেজি থেকে ১৫০কেজি ফল হওয়াটা স্বাভাবিক। সে হিসাব অনুযায়ী এক বছরে একটি গাছ হতে ৮৪ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার ফল পাওয়া যেতে পারে।

গাছের মালিক ফারুকের পরিবারের সদস্যরা এক স্বাক্ষাতকারে এই প্রতিবেদককে বলেন, তার জানামতে টাঙ্গাইলের জলছত্রের ওয়ার্ল্ড ভিশন কার্যালয় চত্বরে একটি বড় গাছ রয়েছে। ওই গাছের ফল শুধু মাত্র রাজধানী ঢাকার হোটেল রুপসী বাংলা (পূর্বনাম শেরাটন হোটেল) ছাড়া বাহিরে কোথাও বিক্রি করা হয় না। রুপসী বাংলা হোটেলের কতৃপক্ষ অগ্রীম টাকার বিনিময়ে ওইসব ফল কিনে থাকেন। ফারুকের বাইরা ভাই কৃষিবিদ মিজানুর রহমান ওই ওয়ার্ল্ড ভিশনে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় একটি ফল খেয়ে বীজটি টবে রোপন করে ছিলেন। গাছ গজানোর কিছু দিন পর ২০০৭ সালে ফারুক সেখানে বেড়াতে গিয়ে টব সহ ওই গাছটি নিয়ে এসে নকলায় তার বাসার সামনে লাগান। ২০১৪ সাল হতে ওই গাছে নিয়মিত ফল আসছে। তিনি বিক্রি না করে সব ফল আত্মীয় স্বজন নিয়ে খেয়ে থাকেন। তিনি বলেন কাঁচা অবস্থায় তেঁতু হলেও আচার করে খেলে বেশ স্বাদ পাওয়া যায় এবং মুখের রুচি বাড়ে।

পুষ্টি বিজ্ঞানের মতে এ্যাভোকাডো ফলে শতকরা ৪ ভাগ ভিটামিন সি, ৪ ভাগ ভিটামিন ই, ৪ ভাগ রিভোফ্লাবিন, ৪ ভাগ বি-৬, ৪ ভাগ সায়ানিন, ৪ ভাগ নায়াসিন, ৪ ভাগ পেনটোথেনিক, ৪ ভাগ ক্যালসিয়াম; ২ ভাগ আয়রন, ২ ভাগ
ফসফরাস, ২ ভাগ ম্যাগনেসিয়াম, ২ ভাগ জিংক, ২ ভাগ কপার, ২ ভাগ ম্যাঙ্গানিজ; ৬ ভাগ ফুলেট ও ফাইবার, পটাশিয়ামসহ গুরুত্ব পূর্ণ বিভিন্ন উপাদান রয়েছে, যা মানব দেহের জন্য অতিব জরুরি।

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, ফারুকের এ্যাভোকাডো গাছে ফল ধরার লক্ষন দেখে মনে হচ্ছে নকলার মাটি এই ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। যেহেতু একটি গাছে অনেক গুলো ফল ধরে এবং দামটাও অনেক, সেহেতু নকলাতে এই ফলের গভীর সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু নকলাতে নয় সারা দেশে এই ফল চাষের ব্যবস্থা করতে পারলে বাংলাদেশ এক সময় এ্যাভোকাডো ফলের দেশ হিসেবে সুনাম অর্জন করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *