মিল্কভিটার জুয়াচুড়িঃ প্রতারিত হচ্ছেন সিরাজগঞ্জের দুগ্ধ খামারীরা

মিল্কভিটার খামারী
শাহ এমরানঃ স্বপ্নমিল্কভিটার খামারী ডেইরী এন্ড ফিশারিজ

“গরীব চিরদিন গরীব থাকবে, টাকা ওয়ালাদের টাকা বাড়বে”–এমনই এক চিত্র খুজে পাওয়া গেল মিল্কভিটা- সিরাজগঞ্জ, শাহজাদপুরের চিথুলিয়া গ্রামের সমিতিতে।

মিল্কভিটা যার নাম জন্ম থেকেই শুনে আসছি। গ্রামে গ্রামে সমিতি করে দুধ সংগ্রহ করে আমাদের কাছে পৌছে দেয়। শাহজাদপুরের চিথুলিয়া গ্রামের এই মিল্কভিটা সমিতির সভাপতি হচ্ছেন মি: ইকবাল। এর মাধ্যমেই আমি সিরাজগঞ্জে যাই আর কত কি ঘটেছে তা তো আপনারা জানেনই। যাই হোক এই ইকবাল সাহেবের কাছ থেকে জানলাম কি ভাবে মিল্কভিটা আর এই সমিতির লোকজন মিলে গ্রামের গরীব লোকদের ঠকায়ে পয়সা ইনকাম করে।

জনাব ইকবাল খুব সকালে মানে ৭ টার মধ্যে ওনার বাড়িতে পৌছতে হবে বলে আমাকে তাড়া করছিল। আমি কিছুটা বিরক্ত হয়েই বললাম, দুধ একটু পরে দোয়ালেতো প্রবলেম নাই, তাই না? ওনি বললেন, না ভাই, আমরা ৮ টার মধ্যে দুধ দোয়ানো শেষ করে বিক্রি করে ফেলি। ৮ টার পরে গেলে সমস্যা। আর আমি হচ্ছি মিল্কভিটা চিথুলিয়া সমিতির সভাপতি, আমাকে থাকতে হয়। ৩০ মিনিটের মধ্যে পৌছে গেলাম সমিতির সামনে। ২ জন লোক খাতা কলম নিয়ে বসে হিসেব লিখছে আর একজন খামারীদের কাছ থেকে দুধ মেপে নিয়ে বুঝে নিচ্ছেন। আমি কিছুক্ষন দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখলাম, ফটোও তুলে ফেললাম। এরপর ইকবাল সাহেবের এর সাথে তার বাসায় গিয়ে চা খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলাম, এই দুধ আপনারা মিল্কভিটার কাছে কত দামে বিক্রি করেন? ওনি বললেন ৩৫-৪৫ টাকা। দুধে ফ্যাট এর পরিমানের উপর নির্ভর করে কত টাকা পাবে খামারী। আমি বললাম এত কম দামে আপনারা দুধ বিক্রি করেন কেন মিল্কভিটার কাছে? অন্যকারো কাছে করতে পারেন না? ওনি বললেন না অন্যকারো কাছে দুধ বিক্রি করা যাবেনা, করলে মামলা হয়ে যাবে। আমি বললাম, এত কম দামেতো আপনারা ঠকতেছেন। এখানে প্রান, আড়ং নাই? ওনি বললেন প্রান আছে, তবে প্রানও মিল্কভিটার থেকে বেশী দাম দিতে চায়না, ২-৩ টাকা বাড়তি দেয়। আমি বললাম, আপনারা আন্দোলন করেন সবাই মিলে দুধের বাড়তি দাম দেবার জন্য। আর মিল্কভিটাকেই কেন দিতে হবে? ওনি বললেন, মিল্কভিটার সাথে আমাদের চুক্তি আছে যে ওদেরই দুধ দিতে হবে, এর জন্য মিল্কভিটা আমাদের বীজ আর চিকিৎসা মেডিসিন ফ্রি দেয়। আমি বললাম তাই? তাহলে তো ভাল। ইকবাল বললেন, আসলে ফ্রি না। কেজি প্রতি ১.৫০ টাকা অবশ্য কেটে রাখে। তাহলে ফ্রি হইলো কেমনে? যে ২০ কেজি দুধ বিক্রি করে তার ৩০ টাকা কেটে রাখে প্রতিদিন, তাহলে মাসে পরে ৯০০ টাকা আর বছরে পরে ৭২০০ টাকা। বীজ, মেডিসিন বাবাদ কি এত টাকা লাগে এক বছরে!!! আর একটা গ্রামে এক সমিতির সদস্য যদি ৫০০ হয় তাহলে কত টাকা জমা হয় সে হিসেব নাইবা করলাম। ইকবাল সাহেব বললেন, ভাই এই সভাপতি নির্বাচন টা অনেক বড় মাপের নির্বাচন। অনেক টাকা পয়সা খরচ করতে হয়। আমি বললাম, এত টাকা খরচ করে নির্বাচন করে লাভ কি? ওনি বললেন, আমরা প্রতি বছর খামারীদের উন্নয়ন বাবদ ২৫-৩০ লাখ টাকা পাই, এই টাকা দেবার দায়িত্ত সমিতির নির্বাচিত মেম্বারদের উপর নির্ভর করে। এটাই লাভ আর দুধে ফ্যাটের পরিমান কম দেখাইলে কিছু ইনকাম থাকে আর কি।

প্রভাবশালী মহল এই গরিব দুস্থ খামারীদের নিয়ন্ত্রন করে যেন তারা বাইরে বেশী দামে দুধ বিক্রি করতে না পারে, নিজেদের অধিকার, নেয্য দাম আদায় করার ব্যাপারে আন্দোলন না করতে পারে। কথা বললেই চুক্তি ভংগের মামলার ভয়। মাঝে মাঝে তারা লুকায়ে ঘোষদের কাছে মানে মিষ্টির দোকানে দুধ বিক্রি করে অল্প করে যেন কেউ না দেখে। কিন্তু তারা জানেনা কি করে আন্দোলন করে দুধের দাম বাড়াতে হয়, তারা জানেনা কি করে নিজের অধিকার আদায় করতে হয়, তারা জানেনা কি করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হয়। টাকা ক্ষমতা আর অপশক্তির কাছে এরা পরাজিত। অথচ এদের কেউ যদি প্রতিবাদ করতে পারত, মিল্কভিটাকে পাশ কাটিয়ে প্রান, আড়ং কিংবা অন্য কেউ যদি এসে বলত আমরা ৫ টাকা কেজি প্রতি বেশী দাম দিব তাহলে হয়ত এদের মুখে হাসি ফুটতো আর আমাদের ডেইরী সেক্টরের আরো উন্নতি হত। আমি জানিনা কবে হবে এর প্রতিবাদ, কবে আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নামব, কবে আমরা এই সুবিধাভোগী অসৎ মানুষদের বিতারিত করে সবাই মিলে একটা সুন্দর দেশ গড়ে তুলব।

আমাদের এই শিক্ষিত চাষীভাইদেরই এই উদ্যোগ নিতে হবে, গ্রামে গ্রামে নতুন করে সমিতি করে নতুন ভাবে উদ্যোগ নিয়ে অসহায় খামারীদের সাথে নিয়ে সব কিছু পুর্নগঠন করতে হবে। নতুন করে জেগে উঠতে হবে, নতুন ভাবে গড়ে তুলতে হবে আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ।

কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *