শেরপুরের নকলায় মাঠ জুড়ে আগাম সবজির সমারোহ

সবজির সমারোহ

মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর)  :
Serpur আগাম সবজির বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের ভাগ্য খুলেছে। উপজেলার কৃষকদের উৎপাদিত আগাম সবজি নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে পার্শবর্তী জেলা,  উপজেলা সহ রাজধানি ঢাকাতেও সরবরাহ করছেন তারা। ওই সবজি গুলোর মধ্যে বেগুন, লাউ, করলা, সীম, গাজর, টমেটো, মূলা, ফুলকপি, বাধাঁকপি, শশা, বরবটি ও বিভিন্ন জাতের শাক উল্ল্যেখযোগ্য। আগাম সবজির ভালো দাম পেয়ে ভাগ্য পরিবর্তনকারী এমন কৃষক বাছুর আলগার রাজু, এনামুল, রাজ্জাক ও মোকসেদ, দক্ষিন বাছুর আলগার সালাম ও  আক্তার, চরবাছুর আগলীর খোকা ও শাহজাহান, চকবড়ইগাছির শফিক মিয়া, ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সদস্য ঈসমাইল, হেলাল, আমীর আলি, বেলাল, আবুতালেব, বানেশ্বর্দীর হাসমত, ছোট মোজারের ফেরদৌস, কান্দা পাড়ার আজিজুল, গরের গাওয়ের মকুল, লাভার শহিদুল, জালালপুরের কামাল, গজারিয়ার মোকলেছ, চিথলিয়ার কাইয়্যুম সহ অনেক আগাম চাষিদের সাথে কথা হয়।  তারা জানান,  বর্ষা মৌসুমে উপজেলার ৫ টি নদী পানিতে ভরা থাকে। ফলে পলি মাটির তলানি পড়ে।  যা শাক সবজি চাষের জন্য অতি উপযোগি মাটি। ধানসহ যেকোন আবাদ করা যায়না। কিন্তু ওই জমিতে শাক সবজি চাষ করলে অন্য যেকোন ফসলের চেয়ে ৩/৪ গুন লাভ বেশি পায় কৃষকরা। মৌসুমের সময় সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় শাক সবজির দাম একটু কম থাকে।  কিন্তু আগাম শাক সবজির দাম অনেক বেশি থাকায় কৃষরা আগাম শাক সবজি চাষে ঝুঁকছে। আগাম চাষি মোকসেদ বলেন, বর্তমানে  বেগুন ১৭শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা প্রতিমণ, শশা ৭শ  টাকা থেকে ৮ শ’ টাকা প্রতি মন বিক্রি হচ্ছে। আগাম গুটি করলা চাষি নুরে আলম সিদ্দিক রাজু বলেন,  বর্তমানে  প্রতিমন করলা ১৭ শ’ থেকে ১৮ শ’ টাকা করে বিক্রি করছেন। ভরা মৌসুমে যার মূল্য হয় প্রতিমন  ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা করে। আগাম টমেটো চাষি সালাম ও আক্তার জানান, যে টমেটো ভরা মৌসুমে প্রতি মন বিক্রি হয় ১২০ টাকা থেকে ২শ’ টাকা করে, সে টমেটোই এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজর টাকা করে মন।  এসব বিবেচনায় উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার সবজি চাষির মধ্যে আগাম সবজি চাষ করেছেন অন্তত ৬/৭ হাজার জন কৃষক। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, চলতি বছর ২ হাজার ৭৫০ একর জমিতে শীত কালীন সবজি চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। তার মধ্যে আগাম সবজি চাষ হয়েছে ৬ ‘শ একর জমিতে।  শতী কালীন শাক সবজি চাষির সংখ্যা ২৫ হাজার হলেও আগাম চাষির সংখ্যা ৫/৬ হাজার জন।

এসএপিপিও মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এবার শীতে বেগুন ৬২৫ একরে, ৪২৫ একরে টমেটো, ৬২৫ একরে মূলা, ৩৬২ একরে শশা, ১২৫ একর জমিতে শীত লাউ, ৬৩ একরে সীম, ৮৫ একরে ফুলকপি, ১১৫ একরে বাধাঁ কপি এবং ৭৫ একর জমিতে মরিচ চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া চলতি মৌসুমে উদ্যান ফসলের মধ্যে সরিষা ৩ হাজার একর জমিতে, গোল আলু ২ হাজার ৭৫০ একর জমিতে, মাস কলাই ২ হাজার একরে, ভুট্রা ১ হাজার ১২৫ একরে, পেঁয়াজ ৫৫০ একরে, মিষ্টি আলু ৫৫ একর জমিতে, চীনা বাদাম ২৫ একর জমিতে, তিল ১৩ একরে এবং বিভিন্ন শাক চাষের জন্য লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে প্রায় ২৫০ একর জমি। সহকারি কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, গত বছরের চেয়ে শাক সবজি চাষির সংখ্যা না বাড়লেও, বেড়েছে আগাম চাষির সংখ্যা।

উপজেলা কৃষি  সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ জানান, আগাম সব কিছুর দাম বেশি থাকায় আগামিতে আগাম শাক সবজি চাষির সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, ভরা মৌসুমের তুলনায় আগাম ফসলের উৎপাদন অনেক কম হয়। কিন্তু আগাম ফসলে দাম বেশি পাওয়ায় অল্প শ্রমে, কম পুঁজি ও স্বল্প জমিতে লাভ বেশি পায় কৃষকরা। তাই দিন দিন কৃষকরা যে কোন ফসল আগাম করার দিকে ঝুঁকছে। আর এর জন্য কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের প্রয়োজনিয় সকল পরামর্শ সেবা দিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *